কলকাতার প্রথম ভাসমান বাজার আর থাকছে না। সিঙ্গাপুরের আদলে কলকাতা পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে ইএম বাইপাস লাগোয়া ব্রিজি-পাটুলি মোড়ের কাছে জলাশয়ের মধ্যে এই বাজার তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ভাসমান বাজারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময়ে কেএমডিএ এবং কলকাতা পুরসভার তরফে দাবি করা হয়েছিল, শুধু কলকাতা নয়, দেশ এবং রাজ্যের মধ্যে এটাই প্রথম ভাসমান বাজার।
তারও আগে ২০১৬ সালে শুরু হয়েছিল এই অভিনব ভাসমান বাজার তৈরির পরিকল্পনা। সেই সময়ে ইস্টার্ণ মেট্রোপলিটন বাইপাসকে আরও চওড়া করার জন্য ফুটপাথ থেকে হকারদের সরিয়ে তাদের পুনর্বাসনের জন্য ভাসমান বাজার গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়। স্থানীয় একটি পরিত্যক্ত জলাশয়ে শালবল্লা পুতে তাঁর উপরে কাঠ দিয়ে পাটাতন বানানো হয়েছিল। এটাই ছিল বাজারের রাস্তা। দোকানিরা বসতেন নৌকোর উপরে। প্রতিটি নৌকার উপরে ছিল দু’টি করে দোকান। স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম মণ্ডলের কথায়,’বাজারটি দেখতে খুব সুন্দর ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই এখানে বেচা-কেনা জমছিল না।’
এলাকার একাধিক বাসিন্দার প্রশ্ন, মাত্র বছর পাঁচেকের ব্যবধানে এই রকম একটি সুন্দর প্রকল্পের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়লো কেন? তাঁদের দাবি, সংস্কারের নাম করে দীর্ঘ দিন ভাসমান বাজার খোলাও হয়নি। কলকাতা পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার স্বরাজকুমার মণ্ডল বলেন,’ভাসমান বাজারের জলাশয়ে নৌকোর নীচে কচুরি পানা জমেছে। সেই পানা তোলার কাজ চলছে। পরবর্তী কোনও পরিকল্পানার কথা আমার জানা নেই।’ বাসিন্দাদের দাবি অস্বীকার করে তিনি জানান, ভাসমান বাজার এখনও চলছে।
কেএমডিএ ও কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, সমস্যা মূলত নৌকো নিয়ে। যে নৌকোর উপরে এই বাজার বসতো, অনেক সময়েই তা ভেঙে যাচ্ছিল। ওই সূত্রের দাবি, নৌকো রক্ষণবেক্ষণের জন্য একটা মোটা টাকা ব্যয় হতো। কিন্তু অত আয় বাজার থেকে হতো না। তার উপরে নৌকোর মিস্ত্রি পাওয়াও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
পুরসভা সূত্রের দাবি, তাই এখন ভাসমান বাজার সরিয়ে ওই জলাশয়কে সংস্কার করে সৌন্দর্যায়ণ করার কাজ চলছে। আগামী আর্থিক বছরেই এই পরিকল্পনা কার্যকর হতে চলেছে। জানা গিয়েছে, ভাসমান বাজারের দোকানিদের পুনর্বাসনের জন্য দুটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। একটি জায়গা হলো পাটুলি থানার পাশের একটি রাস্তা। আর একটি জায়গা বাঘাযতীন উড়ালপুল লাগোয়া।
পুনর্বাসনের জন্য দোকানিদের দোকান তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে পুরসভার ওই সূত্রে দাবি করা হয়েছে। পাটুলিতে ভাসমান বাজার যে আর থাকছে না, সেই ইঙ্গিত মিলেছে ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তারকেশ্বর চক্রবর্তীর কথাতেও। তিনি বলেন,’বাজারের বর্জ্য পড়ছে জলাশয়ের জলে। তা জলে পচে দূষণ ছড়াচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা বার-বার অভিযোগ করেছেন দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। তাই নৌকোগুলো সরিয়ে জলকে পরিষ্কার করে, ওই জলাশয়টিকে নতুন করে সাজানোর কাজ চলছে।’
এই বাজারে ব্যবহৃত নৌকোগুলো শহরের বিভিন্ন জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। জানা গিয়েছে, জলাশয় সংস্কারের যাবতীয় খরচের টাকা দেবে কেএমডিএ। সেই টাকা ব্যয় করে কাজটি বাস্তবায়িত করবে কলকাতা পুরসভা।