এই সময়, আসানসোল: সব মিলিয়ে আড়াই হাজার পুরোনো রেকর্ড। তাতে রয়েছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গান, কবিতা, নাটকের সংলাপ। রয়েছে কবির কণ্ঠে আবৃত্তি করা রেকর্ডও। নজরুল সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজের নিজস্ব আর্কাইভে থাকা এই বিপুল সংগ্রহ এবার ডিজিটালি প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। নজরুলকেন্দ্রিক গবেষণার প্রয়োজনা এই প্রকল্প ভবিষ্যতে গবেষকদের কাজে আসবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

আর্কাইভের কিউরেটর, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট তথা বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী গৌরব চৌধুরী জানান, প্রতিটি রেকর্ড কার্ডবোর্ডের বাক্সে রাখা রয়েছে। এক একটি বাক্সে রয়েছে ৩০টি করে রেকর্ড। ধুলোর হাত থেকে রেকর্ডগুলোকে বাঁচানো এর উদ্দেশ্য বলে তিনি জানান। গত অক্টোবর মাসে ব্রিটিশ লাইব্রেরি থেকে রেকর্ড সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। রেকর্ডগুলির মধ্যে কাজী নজরুলের নিজের গান, কবিতার রেকর্ড যেমন আছে তেমনই পুরোনো দিনের শিল্পী যূথিকা রায়, আব্বাসউদ্দিন, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজকুমার মল্লিক, আঙুরবালা দেবী, ইন্দুবালা দেবী, গৌরীকেদার ভট্টাচার্য, গিরীন চক্রবর্তী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে নজরুলের গান, নাটক (অন্যের নাটকে নজরুলের গান সমেত) রয়েছে।

এর সঙ্গে আর্কাইভে রয়েছে সঙ্গীতের উপর দুষ্প্রাপ্য কিছু বই, সেই সময়ের রেকর্ড কোম্পানির ক্যাটালগ। পুরোনো কলের গান যা, নজরুল নিজে ব্যবহার করতেন, তাও রয়েছে এখানে। এই আর্কাইভেই রাখা আছে নজরুলের ১২টি পাণ্ডুলিপি। সেগুলিও ডিজিটালি প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কী ভাবে রেকর্ড করা হলো এত রেকর্ড? গৌরব জানান, বিশ্ববিদ্যালয় বা আমাদের এই গবেষণাকেন্দ্রের পক্ষ থেকে কখনও চিঠি দিয়ে কখনও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘শেষে সাড়া ও সহযোগিতা পেয়েছিলাম কলকাতার সুরজলাল মুখোপাধ্যায়, হারুবাবুর জামাই অমিত গুহর কাছ থেকে। হারুবাবুকে কাননদেবী চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, যে কাজ করার কথা ছিল সরকারের অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের, সে কাজ আপনি করেছেন।

তখন মনে হয়েছিল, এটা তো সত্যি আমি একজন গানের শিল্পী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কাজের সঙ্গেও যুক্ত।’ যোগ করছেন, ‘অমিতবাবুর ওখান থেকেই কাজী নজরুলের একটি পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে, তার প্রথম পাতাতেই কবির লেখা বিখ্যাত গান- ‘আলগা করো গো খোপার বাঁধন’ রয়েছে।’ তিনি জানান এ ছাড়া শান্তিনিকেতন থেকে কিছু রেকর্ড এসেছে। নজরুল অ্যাকাডেমি থেকেও কিছু পাওয়া গিয়েছে। আরও বেশ কিছু মানুষ ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তাঁদের সংগ্রহে থাকা নজরুল সংক্রান্ত রেকর্ড তাঁরাও দান করবেন।

সংগ্রহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, কবির নিজের কন্ঠে ১৯২৯-এ নারী কবিতা এবং ১৯৪১-এ রবিহারা কবিতার রেকর্ড। এছাড়া রয়েছে বেশ কিছু কৌতুক নকশা বা নাটকে কবির গাওয়া গানের রেকর্ড। তিনি বলেন, ‘এই রেকর্ডগুলি এবং আমাদের কাছে থাকা কবির ১২টি পাণ্ডুলিপি আধুনিক পদ্ধতিতে ডিজিটালাইজ়ড করার জন্য আমরা শিক্ষা দপ্তরের কাছে অর্থ চেয়ে প্রস্তাব ও পাঠিয়েছি। প্রাথমিক কথাবার্তাও হয়ে গিয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত এই কাজ শুরু করা যাবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version