এই সময়, বর্ধমান: লোকসভায় দাঁড়িয়ে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অন্তর্গত কড়া ‘হিট অ্যান্ড রান’ আইনের ঘোষণা করেছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নতুন আইন মোতাবেক, কোনও গাড়িচালকের গাফিলতিতে কারও মৃত্যু ঘটলে এবং চালক যদি সেখান থেকে পালায় বা পুলিশ-প্রশাসনে খবর না দেয়, তা হলে তাঁকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।

ইতিমধ্যে এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে দেশ তথা রাজ্য জুড়ে। বিভিন্ন জায়গায় ট্রাক, অয়েল ট্যাঙ্কার ও বিভিন্ন গাড়ির চালকরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ন্যূনতম পরিকাঠামো এবং কোনও আলোচনা ছাড়াই কীভাবে এই আইন সরকার পাশ করতে পারে? প্রশ্ন উঠেছে দ্রুত গতির জাতীয় সড়কে টোটো, ভ্যানোর মতো ধীর গতির যানবাহনের অবাধ যাতায়াত নিয়েও।

মঙ্গলবার এই আইনের প্রতিবাদে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে অল ড্রাইভার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক আজহার মণ্ডলের বক্তব্য, ‘জাতীয় সড়ক হোক বা রাজ্য সড়ক, কোথাও ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। জাতীয় সড়কে অবাধে টোটো, ভ্যানো চলছে। কোনও কারণে ওভারটেক করতে গিয়ে যদি সামনে টোটো থাকে তখন সেই গাড়িচালককে ব্রেক কষতেই হবে। তখন পিছনে থাকা গাড়ি এসে ধাক্কা মারতেই পারে। আর ব্রেক না-কষলে সামনের টোটো বা ভ্যানোতে ধাক্কা লাগবে। এটা কাদের দেখার দায়িত্ব?’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘নির্দিষ্ট দূরত্বে গাড়িচালকদের জন্য বাথরুম, খাবারের দোকান থাকার কথা। রাজ্য সড়ক ছেড়ে দিন, জাতীয় সড়কে সে পরিকাঠামো কেন থাকবে না? অনেক মোটা টাকা টোল আদায় করে সরকার। আসলে দুর্ঘটনা কমানোর নামে যে কোনও মূল্যে ড্রাইভারদের টার্গেট করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও গাড়ি কিন্তু ড্রাইভারই চালায়, কোনও যন্ত্রে চলে না, সেটা তাঁদের মাথায় রাখা উচিত। আমরা এর প্রতিবাদ শুরু করেছি। আগামী দিনে রাজ্যের ২৩টি জেলায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে যাবে।’

খাতায়-কলমে জাতীয় সড়কে টোটো, ভ্যানো, সাইকেল, এমনকী মোটরবাইক চলাচলও নিষিদ্ধ। কিন্তু সেসব নিয়ম মানে কে! উদাসীন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও। পূর্বস্থলীর বাসিন্দা গাড়ি চালক সাইদুল শেখ বলেন, ‘জাতীয় সড়কের সর্বত্র অবাধে টোটো চলে। কোনও কারণে টোটোর ভুলে দুর্ঘটনা হলে এলাকার লোকেরা ছুটে এসে বড় গাড়ির চালকদেরই পিটিয়ে মারবে। সেই ভয়ে চালকরা পালিয়ে যায়। এখন এজন্যও যদি চালকদের জেলে যেতে হয়, লক্ষাধিক টাকা জরিমানা ভরতে হয় তা হলে গাড়ি চালাব না আমরা।’

অল ড্রাইভার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি আনারুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও গাড়িচালক নিজের ইচ্ছেয় একটা পিঁপড়েকেও চাপা দেয় না। গাড়ি একটা যন্ত্র। যন্ত্রের কোনও কিছু হঠাৎ খারাপ হলে তার দায় কেন চালক নেবে? তার উপর এখন প্রতি ৫ কিলোমিটার রাস্তায় ২০টি করে স্পিডব্রেকার বসানো হয়েছে। আমাদের জেলাতে এমনও অনেক রাস্তা রয়েছে যেখানে বাজার বসে। এসব কাদের দেখার কথা? অন্যের ভুলে দুর্ঘটনা হলে কেন তার দায় ড্রাইভারদের নিতে হবে?’

Truck Driver Strike News : উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ ট্রাক চালকদের ধর্মঘট-প্রবল ক্ষোভ, কেন প্রতিবাদ? কোথায় আপত্তি জানুন
এদিন গাড়ি চালক সংগঠনের এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ার জন্য জাতীয় সড়ক আধিকারিকদের ফোন করা হলে তাঁরা কেউ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুর্গাপুরে জাতীয় সড়ক দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘একেবারে সঠিক প্রশ্নই তুলেছেন চালকরা। কেন তাঁরা জাতীয় সড়কের সার্ভিসে যে পরিষেবা দেওয়ার কথা সেগুলি পাবেন না? আর জাতীয় সড়কে টোটো, ভ্যানো বা মোটরবাইকের মতো গাড়ির চলাচল অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version