এই সময়: আগামী দিনে নিজের রাজনৈতিক-গতিপথ সম্পর্কে ইঙ্গিত দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা নয়, দল তাঁকে যে দায়িত্ব দেবে, তা তিনি পালন করবেন বলে জানালেন অভিষেক। রবিবার পৈলানের সভা থেকে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালেও দল যদি আমাকে কোনও গুরুদায়িত্ব দেয়, অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করার চেষ্টা করব।’

এ প্রসঙ্গেই অতীতের বিভিন্ন গুরুদায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে দল ২০২১ সালে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে বলেছিল, আমি দিয়েছি। আমাকে দল ২০২৩-এ পঞ্চায়েত ভোটের আগে নবজোয়ার করতে বলেছিল, আমি করেছি। আমাকে দল ওই বছরই দিদির সুরক্ষাকবচ নিয়ে দু’কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে বলেছিল। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।’

তবে ডায়মন্ডহারবার যে তাঁর অগ্রাধিকার, সেটা জানাতেও ভোলেননি অভিষেক। দলের নির্দেশ পেলে তিনি যে বাংলা জুড়ে ছুটে বেড়াতেও দু’বার ভাববেন না, সে ঘোষণাও করেছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। রবিবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের পৈলানে প্রবীণদের বার্ধক্য ভাতা প্রদান কর্মসূচির মঞ্চ থেকে অভিষেক বলেন, ‘সাংসদ হিসেবে আমার প্রায়োরিটি হয়তো ডায়মন্ডহারবারে থাকবে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আর জোড়াফুল প্রতীক নিয়ে দল যখন যেখানে যেতে বলবে, সেখানেই যাব।’

তাঁর ব্যাখ্যা, প্রার্থী হলে তাঁকে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে সময় দিতেই হবে। অভিষেক বলেন, ‘আমি যদি ভেবে নিই, লোকসভা দেখব না, সেটা হয় না। যিনি পঞ্চায়েতের নেতা, তাঁকে তো পঞ্চায়েত দেখতে হবে। তার পর তো আপনি ব্লকের নেতা। দেশ ও রাজ্য জুড়ে আমার আজ যে পরিচিতি, তা ডায়মন্ড হারবারের জন্যই।’

সপ্তাহ খানেক আগে তৃণমূলের একদল নেতা কালীঘাটে অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেন। তারপরে তৃণমূলেরই একটি মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, অভিষেক নিজেকে শুধুমাত্র ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সেই জল্পনার প্রেক্ষিতে অভিষেকের মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

অভিষেক এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই আগামী দিনে আরও তীব্র হবে। তিনি বলেন, ‘শুধু ডায়মন্ডহারবার লোকসভায় কেন্দ্রেই প্রায় ৬৬ হাজার মানুষ একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেছে, অথচ টাকা পায়নি। মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দাবিটি ন্যায্য। এটা আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে দেখব। তারপর ১৫-২০ দিন কেটে গিয়েছে। এখনও কেন্দ্রের কোনও হেলদোল নেই। আমি আশাবাদী।’

Abhishek Banerjee : দলে নবীন প্রবীণ দ্বন্দ্ব, এবার মুখ খুললেন অভিষেক
এরপরই তাঁর ঘোষণা, ‘যদি আগামী এক-দু’মাসের মধ্যে বকেয়া টাকা মেটানোর ব্যবস্থা না হয়, তার ব্যবস্থা কী ভাবে করতে হয় তৃণমূল জানে। সেটাও দরকার হলে আমি ডায়মন্ডহারবার দিয়ে শুরু করব। বাকিটা লড়ে নেব, বুঝে নেব।’ কেন্দ্রের মোদী সরকারকে নিশানা করে অভিষেক আরও বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা থেকে ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা দিল্লি নিয়ে গিয়েছে। আর আমাদের প্রাপ্য আটকে রেখেছে। টাকা বন্ধ রেখে বাংলার মানুষকে মারতে চাইছে। বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতেই হবে।’

এদিন ডায়মন্ডহারবারের ৭৬১২০ জনকে বার্ধক্যভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন অভিষেক। এদিন ডায়মন্ডহারবারের ১৫ হাজার মানুষকে বার্ধক্যভাতা দেওয়া হয়। অভিষেকের দাবি, আগামী তিনদিনের মধ্যে বাদবাকি সবার অ্যাকাউন্টে এই টাকা ঢুকে যাবে। এ প্রসঙ্গে নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘আমি বছরে বারো হাজার করে বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলাম। করে দেখিয়েছি। তাই মানুষের সমর্থন চাওয়ার অধিকার আছে। আপনি কোনও প্রতিশ্রুতি রাখেননি। তাই আপনার ভোট চাওয়ার অধিকার নেই।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version