এই সময়, ঝাড়গ্রাম: নেতাই শহিদ দিবসে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তৃণমূল ও বিজেপি নেতারা। ঘটনার সাক্ষী থাকলেন গ্রামবাসীরা। নেতাই গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে কে ‘আপন’ আর কে ‘পর’ তা নিয়েই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলল বাগ্‌যুদ্ধ! ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি থেকে গুলি চালানোর ঘটনায় ৯ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। আহত হন ২৯ জন।

পরের বছর গঠিত হয় নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটি। ওই কমিটিতে শাসকদলের লোকজন বেশি। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে থাকার সময়ে প্রতি বছর স্মরণসভায় আসতেন। তাঁর বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে তাল কাটে। তৃণমূল প্রভাবিত নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটি শুভেন্দুকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে নারাজ।

এ দিন সন্ধ্যায় লালগড়ে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘২০২২ সালে হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও আমাকে নেতাই গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালে আমি সংঘাতে যাইনি। এখানকার মণ্ডল সভাপতি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। লজ্জা লাগে এখানকার এসপি, একজন ডিএসপিকে দু’দিন কোর্টে পাঠিয়েছেন। সেখানে বলেছেন, নেতাইয়ের শহিদ পরিবার, আহত ব্যক্তি এবং গ্রামবাসীরা আমাকে নাকি চায় না! আবার পরের দিন হেয়ারিং এ দু’জন শহিদ পরিবার এবং আট জন আহতকে কোর্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্ট শুভেন্দু অধিকারিকে নেতাই গ্রামে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার জন্য শর্তাবলি দিয়ে ছাড়পত্র দেয়।’

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, ৬ এবং ৭ জানুয়ারি দু’দিনের পুরো ৪৮ ঘণ্টার অনুষ্ঠানের ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে পুলিশকে। ওখানে কোনও রাজনৈতিক পতাকা বা বক্তব্য দেওয়া যাবে না। কিন্তু তৃণমূলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে এমনকী আমার নাম না করে গালাগালি করেছেন। পুরো রাজনৈতিক ভাবে সভা করেছে। ৪ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। ৬১টি গাড়ি ভাড়া করেছে। তারপরেও লোকসংখ্যা হয়েছে ২৩০ জন। আহত লোকেরা আমাকে ছাড়েননি। তাঁদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রুটি, আলুর দম, তরকারি, বেগুন ভাজা খাইয়েছেন।’

এদিন সকালে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরাও শহিদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারপর তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নেতাই গ্রামে এসেছি। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম।’

Calcutta High Court : নেতাই নিয়ে হাইকোর্টে শুভেন্দু, মামলা দায়েরের অনুমতি বিচারপতির
তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৩ বছর আগে ঘটনা ঘটলেও সিবিআই এখনও ট্রায়াল শেষ করতে পারেনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাদা ধুতিতে রক্তের দাগ রয়েছে। ১৯৯৩ সালে হওয়া পাসওয়ান মামলা, ছোট আঙারিয়া, নেতাই মামলাও সিবিআই তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। হাইকোর্টের তরফে বলা হয়েছিল সিপিএমের লোকাল কমিটির মেম্বাররা এই ঘটনায় যুক্ত। কিন্তু তারপরও দোষীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। সিপিএমের আমলে নেতাইয়ের মানুষ খুন দেখলেও, বর্তমান সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছেন সকলেই। সিবিআই তদন্ত ধীর গতিতে চলায় একের পর এক অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত হয়েছেন। এতেই ক্ষোভ বাড়ছে নেতাই গ্রামের মানুষের।’

ওই দিনের ঘটনায় নিহত মিতালি আদকের মেয়ে জনতা আদক এসেছিলেন এ দিনের স্মরণসভায়। তিনি বলেন, ‘মাকে হারিয়েছি। কিন্তু ইনসাফ পেলাম না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version