এই সময়, কোন্নগর: স্বামী ও সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েই বান্ধবী ইফফাত পারভিনের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্নে মশগুল ছিল শান্তা শর্মা। একমাত্র সন্তান শ্রেয়াংশু ওরফে ডগ্গুকে খুন করার পরিকল্পনাও অনেক আগেই ছকে ফেলে বান্ধবীর সঙ্গে। পরিকল্পনা ছিল, শিশুটিকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে কিংবা খাবারে বিষ মিশিয়ে মারার। কিন্তু গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তেজনার বশে ইফফাত শান্তার একমাত্র শিশুপুত্রকে ইট, গণেশ মূর্তি দিয়ে থেঁতলে ও সব্জি কাটার ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে খুন করে বলে অভিযোগ। ছেলের এমন নৃশংস খুনের সাক্ষী শান্তা এতদিন নিজেকে সামলে রাখতে পারলেও, পুলিশি হেফাজতে ইফফাতের মুখোমুখি হতেই তার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। বৃহস্পতিবার পুলিশ যখন দুই তরুণীকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করছিল, সে সময় শান্তা মেজাজ হারিয়ে তদন্তকারীদের সামনেই ইফফাতকে চড় মেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পুলিশের দাবি, সন্তানের অমন মর্মান্তিক পরিণতির পর এই প্রথমবার মৃত শিশুর জন্য কোনও আবেগ দেখা গেল শান্তার মধ্যে।পুলিশ সূত্রে খবর, বান্ধবীর চড় খেয়েও চোয়াল শক্ত করে বসে ছিল ইফফাত। তদন্তে জানা গিয়েছে, বাবার সম্পত্তির ভাগের টাকায় কানাইপুরে জমি কিনে নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে ছিল শান্তা। পরিকল্পনা ছিল, পঙ্কজের পরিবার ছেড়ে কানাইপুরের জমি বিক্রি করে দূরে কোথাও ফ্ল্যাট কিনে ইফফাতকে নিয়ে সংসার করার। পুলিশ জানিয়েছে, দুই মহিলার সম্পর্কে ইফফাতই ছিল চালকের ভূমিকায়। গ্রেপ্তারির পর টানা ন’দিন পুলিশ হেফাজতের পর এ দিন উত্তরপাড়া ও শ্রীরামপুর মহিলা থানা থেকে ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে আনা হয়। এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে প্রিজন ভ্যানে মুখ ঢেকে বসে ছিল ইফফাত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়নি সে। এ দিন অভিযুক্তদের শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

আদালত সূত্রে খবর, অভিযুক্তরা পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন একটি রক্তমাখা রুমাল পাওয়া গিয়েছে ঘটনাস্থলের কাছে। পুলিশকে সেই জায়গা দেখিয়ে দেয় ইফফাত। সিআইডির সংগ্রহ করা ফিঙ্গারপ্রিন্ট অভিযুক্তদের আঙুলের ছাপ নিয়ে তা মিলিয়ে দেখা হবে। শিশু খুনের দিনে কানাইপুরের আদর্শনগরে সিসি ক্যামেরায় ইফফাতকে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে।

Konnagar Case : ১৫ বছর ধরে সমপ্রেমী সম্পর্কে শান্তা-ইফফত! হুগলির শিশুহত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়
সেই ভিডিয়োও মিলিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীরামপুর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি সুদীপ সরকার। এ দিন আদালতে পঙ্কজের পরিবারের আইনজীবী ছিলেন অরুণ আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘তদন্তকারী অফিসার সঠিক তদন্ত করছেন। দু’বছর আগের কল রেকর্ড, একটা রক্তমাখা রুমাল পেয়েছেন। আরও অনেক কিছু সিজ করেছেন।’ ধৃতদের লাই ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করানোর আবেদন করা হবে আদালতের কাছে বলে দাবি করেন আইনজীবী। অন্যদিকে অভিযুক্তদের আইনজীবী সৈকত মণ্ডল বলেন, ‘পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version