আর পাঁচটা মানুষের মতোই সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে কাটছিল জীবন। মা বাবা ও এক ছেলেকে নিয়ে নিম্নবিত্ত পরিবার যে ভাবে চলে আর কী! কিন্তু সেই সুখ আর বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। প্রথমে অসুস্থ হয়ে বাবার মৃত্যু। আর এখন মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে শিকলে বেঁধে দিন কাটাচ্ছে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ ব্লকের ১২ নম্বর বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ গোয়ালপাড়ার এক অসহায় পরিবার। অত্যন্ত অসহায়, দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণা সহ্য করে জীবন কাটছে রীতা দাস ও তাঁর একমাত্র ছেলে ইন্দ্রজিৎ দাসের। ছেলেকে বাধ্য হয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছেন মা রীতা দাস। সংসারে পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ নেই তাঁদের।এই প্রসঙ্গে রীতা দাস জানান, তাঁর স্বামী ৫ বছর ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ছিলেন। ছেলে ৮ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। খুব কষ্ট করে দিন কাটছে তাঁদের। কেউ এগিয়ে আসেনি সাহায্যের জন্য। শুধুমাত্র একটি আশ্রম কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িতে দেয়। সরকারি কোনও সাহায্যও এখনও পাননি। দেড়মাস হল তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ছেলের এই অবস্থা। যখন যেদিকে খুশি চলে যায়। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে বাড়িতেও কার্যত অত্যাচার চালায়। এমনকী ঘরের দরজা পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে। তাই বুকে পাথর চেপে বাধ্য হয়ে ছেলের পায়ে শিকল পরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

কখনও কখনও শিকলের বাঁধনে ইন্দ্রজিতের পা কেটে যায়।, যা দেখে মায়ের দু’চোখ ভরে আসে জলে। তবুও ছেলেকে কাছে কাছে রাখতে এছাড়া আর কোনও উপায় নেই দুঃখী মায়ের কাছে। এই পরিস্থিতিতে কাতর ভাবে সাহায্যের আর্জি জানাচ্ছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে প্রতিবেশী প্রকাশ চন্দ্র রায় জানান, ছোটবেলায় ইন্দ্রজিৎ বেশ ভালোই ছিল। পড়াশোনাতেও সুনাম ছিল তার। তারপর হঠাৎই মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরল সে। তার চিকিৎসা করানোর মতে সামর্থ্য নেই দুঃস্থ পরিবারটির। এদিকে শিকল ছাড়া রাখলে কখনও কখনও ট্রেনে চেপে দূরদূরান্তেও চলে যায় সে। ফিরিয়ে আনতে কালঘাম ছোটে তার মায়ের। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই শিকল দিয়ে রাখতে হচ্ছে। পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সহৃদয় ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আবেদন জানান জানিয়েছেন প্রকাশ।

অন্যদিকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উত্তম সরকার, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরিবারটিকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। এখন কতদিনে তাঁদের সুরাহা হয় এবং শিকলমুক্ত হয়ে ইন্দ্রজিৎ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, সেই দিকেই তাকিয়ে রীতা দাস।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version