Sleep Patterns Study,ঘুমের ছায়া কাজের চোখে…! – kolkata 47 percent people in feel tired all day in waking up in morning says data


এই সময়: ওরা কাজ করে। আবার কাজের সময় ঝিমোয়ও। ঝিমোতে ঝিমোতে আর এনার্জি থাকে না। তবু ওরা কাজ করে! কলকাতা শহরের ওয়ার্কফোর্সের প্রায় অর্ধেকই কাজের সময়ে ঝিমোচ্ছেন। কারণ, তেড়ে ঘুম পাচ্ছে তাঁদের। যাঁদের তবু টেবিল চেয়ারে পা তুলে একটু ঘুমের সুযোগ আছে, তাঁদের এক রকম রক্ষা। যাঁদের সে সুযোগ নেই, তাঁদের চোখ ভরা ঘুম নিয়েই কাজ সারতে হচ্ছে।

কিন্তু এত ঘুম পাওয়ার কারণটা কী? রাত জেগে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটির জন্য এঁদের অনেকেরই ভালো ঘুম হচ্ছে না। আর বেশ কিছু মানুষকে রাতে গ্রাস করছে দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস। এক বছর ধরে কলকাতা ও ভারতের নানা শহরে ঘুমের প্যাটার্ন নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ওয়েকফিট (ডট) কো।

কলকাতার সেই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ব্যস্ত শহরে ঘড়ির কাঁটা ধরে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাজের সময়ে ঘুম চেপে ধরে। দেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষের উপর এই সার্ভে চালানো হয়েছে। গত বছর মার্চ থেকে এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সমীক্ষাটি চলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার রিপোর্ট।

রিপোর্ট জানাচ্ছে — কলকাতার ৪৭ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দিনভর ক্লান্তি গ্রাস করে রাখে তাঁদের। সঙ্গে চোখ জ্বালা, মাথা ধরা। সার্ভেতে ৮৮ শতাংশ মানুষই জানিয়েছেন, রাতে মোবাইল ব্যবহারে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে তাঁদের। সোশ্যাল মিডিয়া, ওটিটি-তে সিরিজ়-সিনেমা বা চ্যাটিং-টেক্সটিংয়ের পিছনে সময় দিতে গিয়ে খেয়ালই থাকছে না যে রাত অনেক হলো! আবার ৩১ শতাংশ মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা।

২৫ শতাংশ মানুষকে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় বলে জানিয়েছেন। যার জেরে ঘুমের দফারফা। এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন বছর ছত্রিশের দেবার্য মজুমদার। ডাক্তারও দেখিয়েছেন। আইটি ইঞ্জিনিয়ার দেবার্য বলেন, ‘ডাক্তার পইপই করে ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আমি সেটা এখনও পুরোপুরি কন্ট্রোল করতে পারছি না। সারাদিন কাজের চাপের পর রাতটাই তো আমার সময়! তখনও যদি একটু এন্টারটেনড না হই, তা হলে কখন হব?’

আশুতোষ কলেজের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকারেরও প্রায় একই মত। তাঁর কথায়, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলেজেই কেটে যাচ্ছে। ফিরে খানিকটা সময় রেস্ট নিই। এ দিকে, আমাদের একটা দোকান আছে। কোভিডে বাবা মারা যাওয়ার পর সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকান দেখতে হয়। এরপরে মোবাইলে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি, ফেসবুক করি, একটু আধটু পড়াশোনাও থাকে। ওই রাত ১২ থেকে ২টো— এটাই আমার সময়।’

যার জেরে সকালেও ক্লান্তি কাটে না দেবার্য-প্রিয়াঙ্কাদের। রাত ছাড়া গান শোনা বা গান বাঁধা হয় না বলে জানাচ্ছেন যাদবপুরের পডুয়া অরিজিৎ ব্রহ্ম। তাঁর কথায়, ‘দুপুর দেড়টার আগে ঘুম ভাঙে না। আমি ঘুমোতেই যাই সকাল সাতটায়। রাতটাই তো গান বাঁধা, গান শোনা, নতুন গান তৈরি করে বন্ধুদের শোনানোর সময়।’ কিন্তু দেরি করে ওঠার পরেও যে শরীর ম্যাজম্যাজ করে, মেনে নিচ্ছেন অরিজিৎ।

প্রবীণরাও কম যান না। মোবাইলের খারাপ নেশার কথা স্বীকার করেও সরকারি দপ্তরের সিনিয়র অফিসার, বছর ৫৪-র সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘রাতে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে দেশের দশের খবর দেখি। মাঝেমধ্যে ছেলের ডাউনলোড করে দেওয়া সিনেমাও দেখি। ঘুমোতে ঘুমোতে সেই রাত দেড়টা। বুঝি, এটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু অভ্যাস কাটাতেও পারছি না।’ ফলে কাজের মধ্যে হাই তোলা আর মাথাধরা সৌমেন্দ্রনাথের নিত্যসঙ্গী।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অবিলম্বে এই অভ্যাস ত্যাগ না করলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে কুপ্রভাব পড়বে। যা মারাত্মক হতে পারে। তাঁদের পরামর্শ, অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমোন। স্লিপ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ দাস বলছেন, ‘কম ঘুমের সমস্যা ডেকে আনতে পারে নানা ক্রনিক অসুখ। বিচারবুদ্ধি বিঘ্নিত হওয়া, মুডের সমস্যা তো আছেই।’

এ কারণে সৌরভের প্রেসক্রিপশন— ঘুমের নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করতে হবে এবং তা মেনে চলতে হবে। ঘুমের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করা, ঘুমের আগে মোবাইল জাতীয় যে কোনও স্ক্রিন টাইম কমানো দরকার। আর যাঁরা রাত পর্যন্ত কাজে থাকেন, তাঁদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। প্রয়োজনে কাজের সময়ে টাইম ম্যানেজ করে শর্ট ন্যাপ নেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে কর্মক্ষেত্রে আলোচনা করা উচিত বলে মনে করেন সৌরভ।

World Sleep Day 2024 : ঘুমের ঘাটতি কেড়ে নিচ্ছে সুস্বাস্থ্যের ফর্মূলা, বাড়চ্ছে ক্যান্সারের সম্ভবনাও

ঘুম বিশেষজ্ঞ তথা ইএনটি সার্জেন দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ‘ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো মোবাইল আর ট্যাব। চা-কফি খাওয়ার অভ্যাসও খুব খারাপ। মস্তিষ্কের খাটুনি হয়, এমন কোনও কঠিন বই পড়া গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। এই অভ্যাস তৈরি হলে অনিদ্রা বিদায় নেবে।’ তাঁর পরামর্শ, রাতে শোওয়ার বিছানা দিনভর অন্য কাজে ব্যবহার না-করাই মঙ্গল। সাফসুতরো, টানটান বিছানা ঘুমের সহায়ক।

ঘুম পাড়ানির গান—
* রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমোন
* খুব ভরা বা খালি পেটে ঘুমাতে যাবেন না
* বেডরুমের আবহ রাখুন শান্ত, যথাসম্ভব অন্ধকার
* সন্ধ্যার পর ঝিমুনি ত্যাগ করুন
* রাত ৮টার পর যথাসম্ভব ক্যাফেইন ও ব্লু-স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন
* শুতে যাওয়ার আগে স্নান, অ্যারোমাথেরাপি, বই পড়া, গান শোনার মতো রিল্যাক্সিৼ৾ং হ্যাবিট তৈরি করুন
* মনে উত্তেজনার সঞ্চার হয়, এমন গেম, টিভি-শো, ভিডিয়ো ক্লিপ ঘুমের আগে না-দেখাই ভালো
* ঘুমের আগে চা, কফি, সোডা, চকোলেট ইত্যাদি খাবেন না



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version