আসলে সেটা মিম বা হাস্যকৌতুক ছবি, চুটকি ভিডিয়ো। তবে তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা। মিম ছড়িয়ে ভাইরাল হওয়ার লক্ষ্যেও তাই রাজনৈতিক বক্তব্যকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেটা খোরাকের আড়ালে। লোকসভা ভোটের প্রথম দফার আগের সাত দিনে ফেসবুকে লক্ষ লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে এই সব মিম পেজগুলিই।নেটিজে়নদের অনেকেই এই মিম পেজগুলির অধিকাংশ বা প্রায় পুরোটার সঙ্গেই বিজেপির বক্তব্যের মিল খুঁজে পেয়েছেন। অথচ এরা সরকারি ভাবে বিজেপির কেউ নয়। ফলে এত লক্ষ টাকার উৎস কী, তা নিয়ে বিজেপিকে চেপে ধরতে দেরি করেনি বিরোধীরা। এমনকী নির্বাচন কমিশনের নজরদারিরও দাবি উঠেছে।

ফেসবুকের মেটা অ্যাড লাইব্রেরি রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ১২ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে অন্তত সাত থেকে আটটি মিম পেজ এমন রয়েছে, যারা কয়েক লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে। অর্থাৎ নিজেদের পোস্ট করা মিম, ভিডিয়ো অথবা অন্যান্য কনটেন্ট আরও মানুষের কাছে পৌঁছতে বুস্ট পোস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে ‘মিম এক্সপ্রেস’ (পেজের নাম ‘মিম হাব’)।

প্রথম দফার ভোটের আগের সাতদিনে তারা ফেসবুককে মোট ৩৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এই মিম পেজটিতে কেজরিওয়ালের আম খাওয়া সংক্রান্ত একাধিক কৌতুক রয়েছে। আক্রমণের নিশানায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী থেকে তাবড় বিরোধী নেতারা। ‘ক্রাফটো’ নামে একটি পেজ ১৭ লক্ষ টাকার উপর বিজ্ঞাপন খাতে খরচ করেছে।

তাদের দাবি তারা শুধুই মিম পেজ নয়, এমন একটি সংস্থা যারা প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটারদের পরিচয় করায়। তবে বুস্ট হওয়া পোস্টগুলির মধ্যে বেশির ভাগই ‘ম্যায় মোদী কা পরিবার হুঁ’ (আমি মোদীর পরিবার) সংক্রান্ত, রয়েছে মোদীর গ্যারেন্টি সংক্রান্ত একাধিক পোস্টও।
এই তালিকায় পিছিয়ে বাংলার দু’টি পেজও। প্রথম দফার ভোটের আগে গত এক সপ্তাহে ‘হীরকরাণী বাই বাই’ নামে একটি পেজ চার লক্ষাধিক টাকা ফেসবুকে প্রচারের জন্য ব্যবহার করেছে।

এই পেজের পুরোটাই প্রায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যেমন একটি পোস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বিরক্ত মুখের ছবির পাশে লেখা হয়েছে, ‘রামনবমীর অস্ত্র মিছিল’, আর হাসি মুখের ছবি ব্যবহার করে বলা হয়েছে ‘ঈদের পার্টি কেমন কাটল?’ প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ এটিতে লাইক, হা হা অথবা অন্য রিঅ্যাকশন দিয়েছেন। পোস্টটি করা হয়েছে ১৮ এপ্রিল রাত দশটায় অর্থাৎ প্রথম দফার ভোট শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে।

ঘটনাচক্রে গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ‘হীরকরাণী বাই বাই’ নামে সল্টলেকে বিজেপির পার্টি অফিস থেকে একটি প্রচার অভিযান শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ‘আমার সোনার বাংলা’ নামে একটি পেজ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ করেছে এই সময়ের মধ্যে। যে পেজের কনটেন্টে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানানোর চক্রান্তের বিরুদ্ধে একাধিক ভিডিয়ো, ছবি ইত্যাদি।

স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা এই পেজগুলিকে মূলত বিজেপিরই শ্যাডো পেজ বা ছায়াসঙ্গী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র সুদীপ রাহার বক্তব্য, ‘এই টাকা পুরোটাই ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ওঠা কালো টাকা। যেটা বিজেপি খরচ করছে নানা শ্যাডো পেজের মাধ্যমে। এবেলা ইডি, সিবিআই নিদেনপক্ষে নির্বাচন কমিশনের তা চোখে পড়ে না!’ প্রায় একই সুরে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছেন শ্রীরামপুরের বামপ্রার্থী দিপ্সীতা ধর।

তাঁর বক্তব্য, ‘প্রার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় খরচ করতে গেলে কমিশনের ১২সি ফর্ম অনুযায়ী তা জানাতে হয়। কিন্তু এই বিপুল টাকার খবর কমিশন রাখে না কেন?’ বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এই পেজগুলির কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল নির্বাচনে যে বিপুল টাকা প্রচার করছে ইডি, সিবিআই, নির্বাচন কমিশনের উচিত সেই টাকার উৎসের সন্ধান করা।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version