এই সময়: এতদিন বেনজির গরমের স্পেলে প্রাণ ওষ্ঠাগত হচ্ছিল কলকাতা-সহ রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষের। অবশেষে আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মেনে সোমবার সন্ধের ঝড়বৃষ্টি স্বস্তি এনেছে ঠিকই। কিন্তু প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে দুর্ভোগও হয়েছে অনেকগুলি জেলায়। প্রবল বজ্রপাতে এবং ঝড়বৃষ্টিতে দেওয়াল ধসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এদিন রাত পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ঝড়ের দাপটে রেলের ওভারহেড তার ছিঁড়ে হাওড়া ও শিয়ালদহ দুই ডিভিশনেই ট্রেল চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ব্যাহত হয় বিমান চলাচলও।এদিন ঝড়বৃষ্টি চলাকালীন মৃত্যুর খবর এসেছে পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান ও নদিয়া জেলা থেকে। পুরুলিয়া আড়শা থানা এলাকায় এদিন বিকেলে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে আড়শার চার যুবক পুকুর পাড়ে একটি তেঁতুল গাছের নীচে আশ্রয় নেন। সেই সময়ে বজ্রপাত হলে চারজনই মাটিতে পড়ে যান। তাঁদের উদ্ধার করে শিরকাবাদ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানে প্রিয়রঞ্জন মাহাতো (৩০) ও রাহুল কুমার (২১) নামে দু’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অন্য দুই যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কামাল গ্রামের বাসিন্দা উন্নতি মাঝি (১৯) নামে এক যুবক বাড়ির বাইরে বাঁধা ভেড়া আনতে গিয়ে বাজ পড়ে মারা যান। মৃত্যু হয় ভেড়াটিরও। কেতুগ্রামের খাটুন্দি গ্রামে মাঠ থেকে গোরু আনার সময়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্বনাথ থাণ্ডারের (৬৮)। সঙ্গে থাকা দু’টি গোরুও মারা যায়৷ ঝোড়ো হাওয়ায় ইটের দেয়াল চাপা পড়ে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার বড়গাছির একটি ইটভাটায় মৃত্যু হয় যোগেশ্বর হেমব্রম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী তালাকুড়ি হেমব্রমের (২৫)। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় দুর্যোগ চলাকালীন আরও একজনের মৃত্যু হয়। মালদার কালিয়াচকে ঝড় চলাকালীন গঙ্গায় নৌকা ডুবে দু’জন নিখোঁজ হয়েছেন।

এদিন প্রবল ঝড়ে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার নরেন্দ্রপুরের কাছে ওভারহেড তার ছিঁড়ে বন্ধ হয়ে যায় ওই শাখার ট্রেন চলাচল। রেল সূত্রের খবর, সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার আপ ও ডাউন দুই লাইনেই ট্রেন চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরেও ওই শাখায় ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়নি। হাওড়া ডিভিশনের ডানকুনিতেও তার ছিঁড়ে হাওড়া কর্ড লাইনে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল।

এদিন সন্ধেয় খারাপ আবহাওয়ার জন্য বেশ কিছু বিমান কলকাতায় নামতে পারেনি। কয়েকটি বিমান র‍্যাম্প থেকে ফিরে আসে টার্মিনালে। কয়েকটি বিমানকে ভুবনেশ্বর ও গুয়াহাটিতে ডাইভার্ট করে দেওয়া হয়। এরমধ্যে লখনৌ থেকে কলকাতাগামী একটি বিমানে ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের টিম। সেই বিমানটিকেও গুয়াহাটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এদিন আগরতলাতেও খারাপ আবহাওয়ার জেরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান (এআই ৭৪৫) আগরতলার পরিবর্তে কলকাতায় অবতরণ করে।

ঝড়বৃষ্টির সময়ে নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ। প্রথমে মৃদুমন্দ হাওয়া আর টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে ভাঙড়ের বামনঘাটা, বেঁওতা-১ এবং বেঁওতা-২ অঞ্চলে হুড খোলা গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী প্রচার করছিলেন সায়নী। দমকা হাওয়ার মধ্যে সায়নীর গাড়ির সামনে হঠাৎ ভেঙে পড়ে গাছের ডাল। তবে প্রার্থী বা তাঁর সঙ্গে থাকা কারও আঘাত লাগেনি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version