মণিপুস্পক সেনগুপ্ত
‘ইন্ডিয়া’ জোট সম্পর্কে তৃণমূলের অবস্থান কী, বৃহস্পতিবার হলদিয়ার সভা থেকে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভ্রান্তি দূর করতে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছিলেন, ‘আমরা জোটে থাকব, জোটে আছি।’ শুক্রবার আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি ঘোষণা করে দিলেন ‘ইন্ডিয়া’ দিল্লির দখল নেওয়ার পর সরকারি স্তরে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।এদিন ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের নির্বাচনী জনসভা থেকে মমতা বলেন, ‘যদি আমাদের ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে, তখন আমরা এনআরসি বাতিল করব, ক্যা বাতিল করব, ইউনিফর্ম সিভিল কোড বাতিল করব। এবং সারি, সারনা ধর্ম-সহ অনেক ধর্মের, অনেক ভূমিজ জাতিরও কিছু বলার আছে। তাদের কথাগুলিও শুনব।’ তবে একইসঙ্গে এদিনও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় সিপিএম, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই।

‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এলে তৃণমূলনেত্রীর ‘ক্যা’ বাতিল করার হুঁশিয়ারিকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘উনি বোধহয় ২০২৯ সালের জন্য স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। ২০২৪-এ নরেন্দ্র মোদীই তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছেন। তাই হতাশা থেকে প্রলাপ বকছেন।’

বিজেপি যদি ফের দিল্লির মসনদ দখল করে, তাহলে দেশের পরিস্থিতি কী হতে চলেছে, সেই বিষয়ে এদিন কিছু ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন মমতা। ঘটালের সভা থেকে তিনি বলেন, ‘মোদীবাবু আবার ক্ষমতায় এলে দেশে আর কোনও নির্বাচন হবে না। এটাই শেষ নির্বাচন হবে। উনি সংবিধান ভেঙে দেবেন। মোদীবাবু একাই রাজত্ব করবেন। মানুষের কোনও অধিকার থাকবে না। তাই আমরা বলছি, সংবিধান বেঁচে থাক, মোদী যাক। মানুষ থাক, মোদী যাক।’

Mamata Banerjee : ‘তুমি বিজেপি করো বলেই যাকে ইচ্ছে বদলে দেবে!’ তোপ মমতার

‘ইন্ডিয়া’ জোট ক্ষমতায় এলে তৃণমূল বাইরে থেকে সমর্থন করবে বলে বুধবার বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর এই অবস্থান নিয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেস প্রশ্ন তোলায় ‘বিরক্ত’ মমতা বৃহস্পতিবারই জানান, তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘সর্বভারতীয় স্তরে অনেকে আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি বলেছি, বাংলায় কোনও জোট নেই। কিন্তু ইন্ডিয়া জোট আমিই তৈরি করেছিলাম। ওই জোট নিয়ে আমরা দিল্লিতে সরকার তৈরি করব। ভুল বোঝাবুঝির কোনও ব্যাপার নেই।’

‘ইন্ডিয়া’য় তৃণমূল যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, সে বার্তা স্পষ্ট করতেই মমতা এদিন ‘ইন্ডিয়া’ সরকারের সম্ভাব্য কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন এবং জোট ক্ষমতায় এলে সিএএ-এনআরসি বাতিল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

ঝাড়গ্রামের সভায় চপ্পল ছিঁড়ল মুখ্যমন্ত্রীর, সেফটি পিন দিয়েই জুতো সেলাই করলেন মমতা, বললেন…
বছর চারেক আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে। তাতে রাষ্ট্রপতির সইও পড়ে গিয়েছিল তখনই। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই আইনের রুল ফ্রেম করতে না পারায় বহু বছর সিএএ কার্যকর করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভা ভোটের মুখে নাগরিকত্ব আইনের রুল ফ্রেম করার কথা ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সম্প্রতি শুরু হয়েছে সিএএ-এর শংসাপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াও।

পঞ্চম দফার ভোটের মুখে সিএএ নিয়ে জোরদার প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে এলেই সিএএ সম্পর্কে মমতার অবস্থানের কড়া নিন্দা করেন। সংখ্যালঘু তোষণই যে তৃণমূলের সিএএ বিরোধিতার নেপথ্যের কারণ, বাংলার একাধিক নির্বাচনী সভা থেকে সে দাবি খোলাখুলিভাবেই করেছেন মোদী-শাহরা। এই আবহে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ক্ষমতায় এলে সিএএ-র ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হতে চলেছে, তা ঘোষণা করে তৃণমূল সুপ্রিমোও পাল্টা চাপ বাড়াতে চেয়েছেন বিজেপির উপর।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version