এই সময়, গোসাবা, সাগর ও কাকদ্বীপ: দুর্যোগের মেঘ কেটে যেতেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল সুন্দরবনে। রবিবার ও সোমবার দিনভর রিমেলের জেরে মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝড় বয়ে গিয়েছে আঠারো ভাটির এই দেশে। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হতেই আসরে নেমে পড়ে গোসাবা ব্লক প্রশাসন। গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২২৮টি বুথে এ দিন সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে অস্থায়ী প্যান্ডেল বাঁধার কাজ জোর কদমে শুরু করা হয়।বুথগুলিতেও জেনারেটর পৌঁছনোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। গোসাবায় সোমবার বিকালের পর থেকে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এ দিনই গোসাবা ব্লকে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে এসেছে দ্বীপাঞ্চলের এই ব্লক এলাকায়।

এ দিন সকাল ৯টা থেকে সাগরের কচুবেড়িয়া ভেসেল ঘাট থেকে শুরু হয়েছে কাকদ্বীপের লট নম্বর আটে যাওয়ার জন্য ভেসেল পরিষেবা। লট আটের এক নম্বর জেটিঘাটের পরিবর্তে চার নম্বর জেটিতে গিয়ে ঠেকছে সমস্ত যাত্রী বোঝাই ভেসেল। কারণ, রিমেলের দাপটে এক নম্বর জেটিঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রবিবার থেকে দু’দিন মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সুন্দরবনের দ্বীপাঞ্চলগুলি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল।

জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো এ দিন সকাল থেকে ভেসেল চলাচলের পাশাপাশি সমস্ত ফেরি চলাচলও স্বাভাবিক করা হয়। রিমেলের প্রভাবে বহু জায়গায় গাছ উপড়ে ছিঁড়েছে বিদ্যুতের তার, উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। সোমবার দুপুরের পর ঝড়বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে উপকূল এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ শুরু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে কাজে লাগিয়ে গাছ সরানোর কাজ চালানো হচ্ছে।

কিন্তু এখনো গাছ সরিয়ে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তার লাগিয়ে সাগরদ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়নি। দুর্যোগ থামার প্রায় ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই দ্বীপের বহু গ্রাম। সাগরের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চালানো হচ্ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

এর মধ্যেই সুন্দরবনের হাসপাতালে শিশু মৃত্যু ঘিরে ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তির পর একমাসের শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও হাসপাতালে চিকিৎসকের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। এমনকী বিদ্যুৎ না থাকায় চালানো হয়নি জেনারেটর। ফলে অক্সিজেন এবং নেবুলাইজার না দিতে পারায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে মৃত শিশুর পরিবার।

মৃত শিশুর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের চারজনের একটি দল হাসপাতালে ঘটনার তদন্তে যান। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক জয়ন্ত শুকুল বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিশুর বাবা শিবশঙ্কর মোহতার অভিযোগ, ‘অনেক ডাকাডাকি করলে প্রায় আধ ঘণ্টা পর চিকিৎসক এসে মেয়ের চিকিৎসা শুরু করেন। এর পর অক্সিজেন এবং নেবুলাইজার দেওয়ার জন্য চালানো হয় জেনারেটর। ততক্ষণে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version