বিহারের গোপালগঞ্জ এলাকার মোস্ট ওয়ান্টেড ডাকাত। সোনার দোকানে লুঠ করতে সিদ্ধহস্ত তারা। ডাকাতির কয়েক মাস আগে থেকে চলে রেইকি। অস্ত্র তাদের কাছে খেলনার সমান। কুখ্যাত ‘ সিওয়ান গ্যাং’-এর সদস্যরা ছিল অপারেশন রানিগঞ্জের পেছনে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে।বিহার সহ দেশের নানা প্রান্তে একাধিক স্বর্ণ বিপণি ও স্বর্ণঋণ প্রদানকারী সংস্থার অফিসে এর আগে ডাকাতি করেছে তারা। এবার চোখ পড়েছিলে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল রানিগঞ্জের দিকে। ছক কষা হয়েছিল বহুদিন ধরে। সিওয়ান গ্যাং-এর অন্যতম মাস্টার মাইন্ড সুবোধ সিং বর্তমানে বিহারের বেউড় জেলে বন্দি। গ্যাং-এর সদস্যদের কৌশল শিখিয়ে গিয়েছে সেই। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে সুরজ সিং এবং তার সাগরেদরা হানা দিয়েছিল রানিগঞ্জের সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের শোরুমে।

তদন্ত কী ভাবে এগোচ্ছে?

ঘটনার সরজমিনে তদন্ত করতে মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে আসে সিআইডি ও ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট। সিআইডির চার সদস্যের একটি দল ও ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের তিন সদস্যের একটি দল এসে উপস্থিত হয় রানিগঞ্জের সেই ডাকাতি হয়ে যাওয়া দোকানে। নমুনা সংগ্রহ করা হয় ঘটনাস্থল থেকে।

কী ভাবে হয় ডাকাতি?

রবিবার দুপুর ১২টা ২৪ মিনিটে রানিগঞ্জে ওই গয়নার শোরুমে অতর্কিতে হানা দেয় সাতজন। সবার অলক্ষ্যেই দোকানে ঢুকে পড়ে তারা। কোনও খদ্দের সাজার বাহানা নয়। সরাসরি অপারেশনে নেমে পরে তারা। এর মাঝেই এক ডাকাত সদস্য বাইরে আসে। আরও একজন মাঝেমধ্যেই বাইরের দিকে খেয়াল রাখছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে দু’কোটি টাকার অলঙ্কার লুঠ করে পালায় তারা। তবে, তারা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি, কাছেই ছিলেন জামুরিয়া থানার শ্রীপুর পুলিশ আউটপোস্টের ওসি, সাব-ইন্সপেক্টর মেঘনাদ মণ্ডল। একপ্রস্থ গুলির লড়াই হয় তাঁর সঙ্গে। গুলিতে জখম হয়ে সকানের সামেন মাটিতেই লুটিয়ে পড়ে সোনু সিং। তাকে তুলে নিয়ে বাইকে করে পালানোর চেষ্টা করে তারা। যাওয়ার পথে আসানসোলের কাছ থেকে একটি গাড়িও ছিনতাই করে। বাইক ছেড়ে গাড়িতেই পালায় সাতজন।

পুলিশের অপারেশন শুরু

পুলিস কমিশনারেটের অফিসারদের নিয়ে তিনটি টিম গঠন করা হয়। স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ওই এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়। ঝাড়খণ্ড পুলিশের সহায়তায় গিরিডির সরাইয়ার জঙ্গলেও তল্লাশি চালানো হয়। টিমের মাথা সুরজ সকলকেই জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি দিয়েছিল। গিরিডি থেকে সুরজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আহত থাকায় বেশি দূরে পালতে পারেনি সোনু। তাকেও পরে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Raniganj Dacoity : সোনার দোকানে ফিল্মি কায়দায় ডাকাতি, চলল গুলির লড়াই

কে এই সুরজ?

জেলবন্দি কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিংয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই সুরজ সিং। সিআইডি সূত্রে খবর, এই গ্যাংয়ের সদস্য রাজকুমার সিং ও খালেদ এবং সুরজ রানিগঞ্জে এসে বেশ কয়েকবার রেইকি করে গিয়েছে। এরপরেই ডাকাতির দিন নির্ধারণ হয়। রবিবার ছুটির দিন রাস্তায় লোক কম তাকবে বলেই দিন নির্ধারণ করা হয় বলে অনুমান। তদন্তে নেমে ওই এলাকার টাওয়ার ডাম্প নেন পুলিশ আধিকারিকরা। রাজকুমারের এক সঙ্গী রানিগঞ্জে রয়েছে। তার মাধ্যমেই এই দোকানের খবর পায় তারা।

‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ মেঘনাদের দুঃসাহসিক লড়াই, রানিগঞ্জের ‘সিংহম’-কে কুর্নিশ, দেখুন ভিডিয়ো
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানকার প্রি-অ্যাকটিভেটেড সিম ব্যবহার করছিল দুষ্কৃতীদের ওই দলটি। সেই সিম সরবরাহ করেছিল স্থানীয় কোনও ব্যক্তি। তাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। অন্যদিকে, দুষ্কৃতীদের হাতে থাকা কার্বাইন ও নাইন এমএম আনা হয়েছিল সিওয়ান থেকে। রাজকুমার এই অস্ত্র দিয়েছিল গ্যাংয়ের সদস্যদের। এইসব অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য সিওয়ানে তাদের ক্যাম্পও রয়েছে। রানিগঞ্জে আসা প্রত্যেক দুষ্কৃতী অস্ত্র চালনায় দক্ষ। জেলে থাকা সুবোধের প্ল্যান কার্যকর করেছে রাজকুমার। গোটা অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছে সুরজ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version