গত বছর মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল গ্রামে বেআইনি বাজি কারখানায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়। যা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ-প্রশাসনকে তিনি বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সবুজ বাজি (বাতাসে দূষণ তুলনায় কম ছড়ায়) ছাড়া বাকি সমস্ত বাজি নিষিদ্ধ। সবুজ বাজি তৈরির জন্য শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দরকার। বাড়িতে বাজি তৈরি করায় বিপদের আশঙ্কা।
প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা যাতে আলাদা একটি চত্বরে সবাই মিলে বাজি তৈরি করতে পারেন, সে জন্যই ক্লাস্টার তৈরির পরিকল্পনা। আর সেই বাজি বিক্রির জন্য সেলিং হাব-ও তৈরির কথা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে গত বছর ১৩ জুন বাজি ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন তৎকালীন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তিনি জানিয়েছিলেন, দু’মাসের মধ্যে ক্লাস্টার ও হাব তৈরির কাজ শুরু হবে।
গত বছরই মে মাসে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের (এমএসএমই) অধীনে সবুজ বাজি প্রস্তুত, মজুত এবং বিক্রি সংক্রান্ত একটি উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। যার নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার ম্যানুফ্যাকচারিং, স্টোরেজ অ্যান্ড সেলিং স্কিম’। ঠিক হয়, এই স্কিমে সরকারি ফাঁকা জমি চিহ্নিত করে সেটা এমএসএমই দপ্তরকে ৩০ বছরের লিজ়ে দিয়ে সবুজ বাজির ক্লাস্টার তৈরির কাজে সাহায্য করবে জেলা প্রশাসন।
চম্পাহাটিতে সবুজ বাজির ক্লাস্টারের জন্য ২০ বিঘা এবং সেলিং হাবের জন্য ৬২ বিঘা জমিও নেওয়া হয়। চম্পাহাটি বাজি ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে মানব নাইয়া বলেন, ‘এতদিন কাজ হয়নি ভোটের জন্য। তবে হাবের কাজ ১৪ জুন শুরু হওয়ার কথা। প্রশাসন জানিয়েছে, অল্প কিছু দিনের মধ্যে ক্লাস্টারের কাজও শুরু হবে।’
পশ্চিমবঙ্গ বাজি ব্যবসায়ী উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্নার বক্তব্য, ‘উত্তর ২৪ পরগনার নীলগঞ্জ ও পূর্ব মেদিনীপুরের যেখানে ক্লাস্টার হওয়ার কথা ছিল, সেখানে কাজ কিছুই হয়নি। ক্লাস্টার দ্রুত তৈরি হয়ে বাজি উৎপাদন শুরু না-হলে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করা যাবে না।’
এমএসএমই দপ্তরের এক কর্তা বলছেন, ‘ভোটের জন্য মাঝখানে তিন মাস কিছু করা যায়নি। তবে কাজ দ্রুত শুরু হবে।’ তবে চন্দননগরের পরিবেশ অ্যাকাডেমির তরফে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোলাঘাটের ঘটনা উল্লেখ করে রাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানাগুলো যে বন্ধ হয়নি, সে কথা তাঁরা আগামী সপ্তাহে জাতীয় পরিবেশ আদালতে জানাবেন।