আগামী ১০ জুলাই রাজ্যের যে ৪ বিধানসভা কেন্দ্রে হতে চলেছে উপনির্বাচন, তার মধ্যে অন্যতম বাগদা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মতুয়া অধ্যুষিত বাগদা বিধানসভায় উপনির্বাচন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই কেন্দ্রে এবার তৃণমূলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে বনগাঁর ঠাকুরবাড়ির সদস্যা মধুপর্ণা ঠাকুরকে। বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন বিনয়কুমার বিশ্বাস। তবে এই কেন্দ্রে অবশ্য বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়নি। এখানে বামেদের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের গৌরাদিত্য বিশ্বাসকে। অন্যদিকে অশোক হালদারকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। নাম ঘোষণার পর থেকেই প্রচারেও নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা।ইতিমধ্যেই বাগদা উপনির্বাচনে তৈরি হয়েছে ‘ট্যুইস্ট’। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সবাইকে চমক দিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নির্দল প্রার্থী সত্যজিৎ মজুমদার। পেশায় স্কুল শিক্ষক সত্যজিৎ বাগদারই বাসিন্দা। তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় দেখা যায় এক ভিন্ন ছবি। প্রার্থীর গলায় দেখা যায় গেরুয়া উত্তরীয়। প্রার্থীর সঙ্গে উপস্থিত কর্মীদের হাতে বিজেপির পতাকা, মুখে জয় শ্রীরাম স্লোগান। মিছিল দেখে বোঝার উপায় নেই, মনোনয়ন জমা দিতে কোনও নির্দল প্রার্থী এসেছেন না বিজেপি প্রার্থী। স্থানীয় রাজনৈতিকমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, এলাকার বিজেপি কর্মীদের একটা বড় অংশের দাবি ছিল, ‘ভূমিপুত্র’ সত্যজিৎ মজুমদারকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু সত্যজিৎকে টিকিট না দেওয়ায়, শেষ পর্যন্ত তাঁর অনুগামীরাই তাঁকে নির্দল হিসেবে মনোনীত করেছেন। আর এই মনোনয়নকে ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা এলাকায়।

যদিও এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। বরং দলের তরফে ঘোষিত প্রার্থী বিনয়কুমার বিশ্বাসের ভোট বৈতরণী পার করাতেই এখন ব্যস্ত সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ও বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি দেবদাস মণ্ডল। রাতদিন প্রার্থীকে নিয়ে বাগদার বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা। এক্ষেত্রে শান্তনু ঠাকুরের দাবি, বিনয়কুমার বিশ্বাসও বাগদার ‘ভূমিপুত্র’। তিনিও বাগদার এলাকারই বাসিন্দা। তাই তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলা যায় না। শান্তনুর আরও দাবি, ৫০ জন নির্দল দাঁড়ালেও কোনও লাভ হবে না। বরং বিজেপির জয়ের ব্যবধার আরও বাড়বে। পাশাপাশি বিনয়কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘দল যাঁকে মনোনীত করবে, তিনিই লড়াই করবেন। যে কেউ প্রার্থী হতেই পারেন, সেটা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার।’ উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়ে জয়ী হন বিশ্বজিৎ দাস। যদিও পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূলের টিকিটে লড়লেও জয় অধরাই থাকে। এমনকী বনগাঁ লোকসভার বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের দিক থেকেও বাগদায় ২৫ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। যদিও পঞ্চায়েত ভোটে বাগদা বিধানসভার অন্তর্গত ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি যায় তৃণমূলের দখলে।

এদিকে ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুরও প্রচার চালাচ্ছেন জোরকদমে। তাঁর দাবি, গত ১০ কেন্দ্রের সরকার কোনও কাজ করেনি। বরং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সুফল পেয়েছে মানুষ। আর প্রচারে মানুষের কাছে গিয়ে সেই সমস্ত কথাই তুলে ধরছেন মধুপর্ণা। নিজের জয় নিয়ে ১০০ শতাংশ আশাবাদী তিনি। অন্যদিকে রাজনৈতিকমহলের একাংশ মনে করছে, নির্দল প্রার্থীর ভোট কাটাকাটির ফায়দা পেতে পারে তৃণমূল।

যদিও লোকসভা ভোটের আগে দেশে সিএএ লাগু হওয়ায় মতুয়া সম্প্রদায়ের একটা অংশের মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফলেও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। এমনকী বাগদা উপনির্বাচনেও তার প্রভাব দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে আবার এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও বেশকিছু বাঁশের সাঁকো নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে বাগদাবাসীর একাংশের মনে। সেক্ষেত্রে দেখার এবারের নির্বাচনে আদতে কাকে আশীর্বাদ দেয় বাগদার মানুষ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version