এই সময়: ভারত-বাংলাদশ জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে বিতর্ক নতুন মোড় নিল মঙ্গলবার। এ বিষয়ে কেন্দ্রের বক্তব্যকে অসত্য বলে দিল্লির যুক্তিকে নস্যাৎ করল রাজ্য। জলবণ্টন ইস্যুতে সোমবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে গুচ্ছ অভিযোগ ও দাবি তুলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার কেন্দ্র জানায়, চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বাংলার প্রতিনিধিত্ব ছিল এবং তাদের বক্তব্য গৃহীতও হয়েছে।কিন্তু এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা তথ্য দিয়ে জানান, শুধুমাত্র টেকনিক্যাল কমিটিতে রাজ্যের একজন প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, জলবণ্টনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কিছু ডেটা আর টেকনিক্যাল তথ্য রাজ্যের থেকে নিয়ে নীতি-নির্ধারণের মতো গুরুতর বিষয়ে বাংলার সঙ্গে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক চুক্তির ব্যাপকতা যেমন হওয়া উচিত ছিল, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন ছিল, তার কোনওটাই হয়নি।

রাজ্যের এ-ও দাবি, গঙ্গা-তিস্তার পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে প্রবহমান অন্য নদীর বিষয় আলোচনায় আসেনি। ফলে জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে অভিযোগ রাজ্য তুলেছিল, এ দিন তার সুর আরও একধাপ বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে জলচুক্তি নিয়ে রাজ্যের আপত্তি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিন ঢাকায় বলেন, ‘এটা ওদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে আমরা কোনও মন্তব্য করব না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী দু’জনের সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।’

এদিন কেন্দ্রীয় প্রচারমাধ্যমে বলা হয় যে, ১৯৯৬ সালের গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে রাজ্যের দাবি ঠিক নয়। চুক্তি পর্যালোচনার (রিভিউ) জন্য ২৪ জুলাই ২০২৩ সালে জলশক্তি মন্ত্রক একটি কমিটির জন্য রাজ্য সরকারের থেকে প্রতিনিধি চায়। ওই বছরের ২৫ অগস্ট সেচ দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে (ডিজ়াইন অ্যান্ড রিসার্চ) সেই কমিটির জন্য মনোনীত করে রাজ্য। ২০২৪-এর ৫ এপ্রিল সেচ দপ্তরের এক যুগ্মসচিব আগামী ৩০ বছরে রাজ্যের জলের মোট চাহিদার কথা কেন্দ্রকে জানান।

চুক্তি পর্যালোচনায় রাজ্য সরকারের বক্তব্য গৃহীত হয়েছে বলে কেন্দ্রের তরফে যা বলা হয়েছে, তা অসত্য বলে এ দিন দাবি করেন আলাপন। তাঁর যুক্তি, ‘যে বিষয়টি বাংলাকে অবগত রেখে করা হয়েছে বলে কেন্দ্র দাবি করছে, তা হলো ২০২৩-এর ২৪ জুলাই জলশক্তি মন্ত্রকের তৈরি ১২ সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি। তাতে রাজ্যের সেচ দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে রাখা হয়েছিল। ১৪ জুন ২০২৪-এ সেই কমিটি কেন্দ্রীয় জল কমিশনকে তাদের রিপোর্ট দেয়। যা জলশক্তি মন্ত্রকে জমা পড়ে। কেন্দ্রের তরফে যা রাজ্যের মত বলা হচ্ছে, তা কেবলমাত্র তাদের তরফে চাওয়া দু’-একটি ছোট ইনপুট ছাড়া আর কিছুই নয়।’

আলাপন বলেন, ‘ওই কমিটিতে রাজ্যের প্রতিনিধি ছিলেন মাত্র একজন। আর একজন বিহারের। বাকি ১০ জনই কেন্দ্রের।’ তিনি জানান, ২৪ জুন লেখা চিঠির আগে ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর, ওই বছরেরই ২১ ফেব্রুয়ারি এবং তারও আগে ২০১৭ সালের ২৫ মে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

নমোর গঙ্গা-তিস্তা আশ্বাসে মমতা কই! উষ্মা জানিয়ে দিল্লিকে চিঠি রাজ্যের

তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ জলবণ্টনের সঙ্গে রাজ্যের কোটি কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে। গঙ্গার ভাঙনজনিত সমস্যা ছাড়াও এর উপর নির্ভর করে আমাদের কৃষি, সেচ, পানীয় জল-সহ প্রভূত বিষয়। তার থেকেও বড় কথা, এর উপরে রাজ্যের অর্থনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক বিষয়ও নির্ভরশীল।’

আলাপনের আরও অভিযোগ, ‘জলশক্তি মন্ত্রক ওই কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজ্যকে কোনও চিঠি দেয়নি। কোনও যোগাযোগ করেনি, আলোচনাও হয়নি। এমনকী কেন্দ্র ও রাজ্যে নীতি নির্ধারক কোনও কমিটিতেই ভারত-বাংলাদেশ জলচুক্তি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version