মেরেকেটে আর মাস দুয়েক অপেক্ষা করবেন তিনি। ততদিনেও যদি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁর দিকে ফিরে না তাকায়, তাহলে রাজনীতি ছাড়ার কথাই ভাববেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শুক্রবার নিজেই ফাঁস করে দিয়েছেন দিলীপ! যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বিজেপির অন্দরে। জল মাপতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও।২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত দিলীপই ছিলেন বঙ্গ-বিজেপির সব থেকে হেভিওয়েট মুখ। কিন্তু গত তিন বছরে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে দিলীপ বিজেপিতে ‘সর্বহারা’। পার্টির যাবতীয় সাংগঠনিক পদ আগেই খুইয়েছিলেন। এ বারের লোকসভা ভোটে হেরে তিনি আর জনপ্রতিনিধিও নন।
তাতেও না দমে দিলীপ নিজের উদ্যোগে রাজ্য সফরে বেরিয়েছেন। বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে কথা বলছেন দলের নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু তারপরও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের টনক নড়ছে না বলে অভিযোগ দিলীপ ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতাদের।
বেশ কিছুদিন ধরেই ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর সম্পর্কে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের উদাসীনতা প্রসঙ্গে উষ্মা প্রকাশ করছিলেন দিলীপ। তাঁর এই উষ্মা ঘনিষ্ঠ মহলের চৌহদ্দিতে আটকে না রেখে শুক্রবার তিনি নিজেই ‘পাবলিক’ করে দিলেন। দিলীপের কথায়, ‘জেলায় জেলায় ঘুরছি। কর্মীরা জানতে চাইছেন, বিজেপিতে আমার বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় কী। তাঁদের কোনও উত্তর দিতে পারছি না। এ ভাবে তো চলতে পারে না। সংগঠনে কিছু রদবদল হওয়ার কথা। মাস দুয়েক দেখব। তারপরও আমাকে কোনও দায়িত্ব না দিলে অন্য কিছু ভাবতে হবে।’
তবে তিনি যে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে নাম লেখাবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়ে দিলীপ বলেন, ‘আমি টাকা কামানোর জন্য রাজনীতিতে আসিনি। মানুষের কাজ করার জন্য এসেছিলাম। বিজেপি যদি সুযোগ না দেয়, তা হলে রাজনীতি করব না। অন্য কোনও ভাবে মানুষের কাজ করব। রাজনীতিতে আসার আগেও তো আমি মানুষের কাজই করতাম।’
দিলীপ হঠাৎ কেন প্রকাশ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ডেডলাইন দিলেন, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির একাংশের মতে, পার্টিতে সাংগঠনিক রদবদলের আগে দিল্লির উপর স্নায়ুচাপ বাড়াতেই রাজনীতি ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। আবার তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘২০১৪-তে আরএসএস থেকে আসার পর প্রথম দু’মাস দিলীপদাকে কোনও দায়িত্বই দেওয়া হয়নি। তাতে বিরক্ত হয়ে উনি ফের আরএসএস-এ ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তারপরই তাঁকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক করে দেওয়া হয়।’
এদিকে, দিলীপের প্রকাশ্য-উষ্মা দেখে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘আমার সঙ্গে দিন সাতেক আগেও দিলীপদার কথা হয়েছে। আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলব।’ দিলীপ ইস্যুতে বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘এটা কাম্য নয়। নিজের দলেই দিলীপ ঘোষ অসম্মানিত হচ্ছেন দেখে খারাপ লাগছে। তবে বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের কী বলার থাকতে পারে!’