অশীন বিশ্বাস, আড়িয়াদহ
ছাপোষা দুধ ব্যবসায়ী জয়ন্ত সিংয়ের জায়ান্ট সিং হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে দীর্ঘ অপরাধের ইতিহাস। শাসক ঘনিষ্ঠ জায়ান্ট সেই অপরাধের হাত ধরেই গলি রাস্তার খাটাল থেকে এক বছরেই পরিত্যক্ত জমি দখল করে বানিয়ে ফেলেছে কোটি টাকার প্রাসাদোপম বাড়ি। কিন্তু এত টাকা এলো কোথা থেকে?আড়িয়াদহের মৌসুমি মোড় থেকে গঙ্গার দিকে একটু এগোলেই সরু গলির মধ্যে জায়ান্টের পুরোনো খাটাল বাড়ি। ঘনবসতির মধ্যে এখনও সেখানে রমরমিয়ে চলছে খাটালের ব্যবসা। যে গলিতে একটা সাইকেল যাওয়ার উপায় নেই, সেখানে সিসিটিভির বহর দেখলে মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। প্রতিপত্তি বাড়তেই খাটাল বাড়ির জয়ন্ত বদলে ফেলেছে ঠিকানা।

খাটালের উল্টোদিকের গলিতে প্রতাপ রুদ্র লেনে পরিত্যক্ত একটি জমিতে বাচ্চারা খেলাধুলো করত। সেই জমি দখল করে এক বছরেই মাথা তুলেছে জায়ান্টের দুধসাদা তিনতলা অট্টালিকা। বাড়ির লাগোয়া পুকুরের বেশ কিছুটা অংশ ভরাট হয়ে ঢুকে গিয়েছে ওই বাড়ির মধ্যে। দামী মার্বেল, কাচে মোড়া বাড়ির সামনে রাখা বিলাসবহুল গাড়ি। সামনে বিশাল গেট। আশপাশের ঝুপড়ি-বস্তির মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়ানো বাড়িটাকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় রাজপ্রাসাদ।

তবে জায়ান্টের এই বৈভবের পিছনে অপরাধের ইতিহাসের সঙ্গেই রয়েছে রাজনৈতিক মদত। প্রভাবশালী বিধায়কের ছত্রছায়ায় থেকে জয়ন্ত নিজেই হয়ে উঠেছিল ‘বস’। তার অপরাধের তালিকায় মারধর, হুমকি, তোলাবাজি কী নেই! আড়িয়াদহে গত পাঁচ-ছয় বছরে রীতিমতো সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে জয়ন্ত।

নিজের এক সময়ের সঙ্গী অরিত্র ঘোষ ওরফে বুম্বার প্রোমোটিং ব্যবসাকে নিজের সিন্ডিকেটের অধীনে আনতে চেয়েও না পারায় ২০২৩ সালের ২৯ জুন বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় তাঁর উপর গুলি চালায় জয়ন্তের দলবল৷ পায়ে গুলি লাগে বুম্বার। উইকেট, কোদালের বাট দিয়ে তাঁকে মারা হয়। সেই ঘটনার ৯ দিন পর কালিম্পং থেকে জয়ন্ত গ্রেপ্তার হয়। দেড় মাস জেল খেটে ফিরে এসে আবার স্বমহিমায়।

নিষ্ঠুর বর্বরতার কারখানা যেন জায়ান্টের ক্লাব!
স্থানীয় প্রোমোটাররাও তার ভয়ে তটস্থ। জানা গিয়েছে, কোনও প্রোমোটারের কাছে কাঠা প্রতি ২ লক্ষ টাকা, কারও কাছে বছরে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তার ডিমান্ড ছিল। জায়গা বিশেষে টাকার অঙ্ক বাড়ত বা কমত। এলাকায় নিজস্ব বাহিনী তৈরি করার পাশাপাশি গ্যাংয়ে সদস্য বাড়াতে বিহার থেকে ছেলেদের এনে তাদেরও তালিম দেওয়ার কাজ সে শুরু করেছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল, ভয় পেয়ে সহজেই যাতে প্রোমোটার বা ব্যবসায়ীরা টাকা দিতে বাধ্য হন।

স্থানীয়দের একাংশের মত, সেই তোলাবাজির টাকাতেই এত অল্প সময়ে ওই প্রাসাদোপম বাড়ি হাঁকিয়েছে জায়ান্ট। যাতে মদত ছিল শাসকদলের এক নেতার। যদিও স্থানীয় বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, ‘ওদের কেউই শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় ছিল না। ওরা বরাবরই প্রোমোটিং করত।’

তবে কামারহাটির পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, ‘জয়ন্তর নতুন বাড়ি বৈধ না অবৈধ জমিতে হয়েছে, পুকুরের অংশ দখল করে হয়েছে কিনা সবটাই খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। বেআইনি কিছু হলে পুরসভার তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনবসতি এলাকায় কী ভাবে খাটাল চলছে সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version