এই সময়: দু’মাস আগে শুরু হয়েছিল ‘অপারেশনের’ পরিকল্পনা। যাদের অপারেশন হবে, সেই সাত জনের প্রত্যেকেরই বয়স ৫০ বছর পেরিয়েছে। বয়স যত বেশি হবে, অপারেশনের ঝুঁকিও তত বাড়বে, সময়ও বেশি লাগবে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। সময় লাগল ১০ ঘণ্টারও বেশি। ওই দীর্ঘ সময় খরচ করে হাওড়া রেল স্টেশনের ২৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য তিনটি অশ্বত্থ, তিনটি বট এবং একটি কদম— মোট সাতটি গাছকে নির্মাণের জায়গা থেকে সরিয়ে পোঁতা হলো এক কিলোমিটার দূরে নিরাপদ এক জায়গায়।উন্নয়ন হবে, তবে পরিবেশের ক্ষতি করে নয়— আপাতত এমনটাই মন্ত্র ভারতীয় রেলের। স্টেশন তৈরি থেকে নতুন লাইন পাতা অথবা রেলের কোনও অফিস তৈরি— পরিবেশের ক্ষতি যতটা সম্ভব কম করেই কাজ করতে হবে বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে রেলবোর্ড থেকে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তার নমুনা দেখা গিয়েছে কলকাতাতেও।

মেট্রো রেলের একাধিক লাইনে কাজের সময়ে বেশ কয়েকটি গাছের জায়গা বদল করতে হয়েছে। এ বার পূর্ব রেলও সেই পথে হাঁটল। হাওড়া স্টেশনের ২৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনার সময়ে দেখা গিয়েছিল, ৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো অন্তত সাতটি গাছ নির্মাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, রেল মিউজ়িয়মের কাছে ওই গাছগুলোকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

সে জন্য দু’দিকেই একসঙ্গে কাজ শুরু হয়। গাছগুলো সরিয়ে নিয়ে যে জায়গায় পোঁতা হবে, সেই জায়গাকে গাছ বসানোর উপযুক্ত করে তুলতে মাপ মতো গর্ত খুঁড়ে নানা ধরনের জৈব-রাসায়নিক ছড়িয়ে রাখা হয়। অন্য দিকে, গাছগুলো যেখানে ছিল, সেই জায়গায় প্রতিটি গাছের চারপাশে খোঁড়া হয় প্রায় ৬ ফুট গভীর গর্ত।

তার পর গাছগুলোর ডালপালা ছেঁটে এবং প্রধান শিকড় ও তার অন্যান্য সহযোগী অংশ কেটে গাছগুলোকে তুলে ফেলার উপযুক্ত করে তোলা হয়। ওই সময়ে গাছের শরীরে যাতে জলের অভাব না-দেখা দেয়, সে জন্য বিশেষ কয়েক ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত একটি ২৫ টনের ক্রেনের সাহায্যে সাবধানে সাতটি গাছকে মাটি থেকে তুলে ট্রাকে করে তাদের নতুন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে পূর্ব রেল। মাটি থেকে তোলার পর নতুন করে বসানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটা ১০ ঘণ্টায় সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রতিটি গাছই দ্রুত নতুন জায়গার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version