এই সময়, হাওড়া: নবান্ন অভিযানের জেরে পুলিশের নজিরবিহীন ‘ব্যবস্থাপনা’য় মঙ্গলবার চরম দুর্ভোগে পড়তে হলো সাধারণ মানুষকে। নবান্ন অভিযানের নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর একটা। কিন্তু সেই ভর দুপুরের মিছিল আটকানোর জন্য সকাল থেকেই নবান্ন থেকে চার পাঁচ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত হাওড়া ও কলকাতামুখী পথে এমন ভাবে ব্যারিকেড দিয়ে দেওয়া হয় যাতে কোনও গাড়ি চলাচল করতে না পারে।আটকে পড়েন হাজার হাজার নিত্যযাত্রী, রেলযাত্রী এমনকী অ্যাম্বুল্যান্সও। বেলা দশটা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত দুই শহরের লাইফলাইন হাওড়া ব্রিজ এ ভাবে বন্ধ থাকার কথা মনে করতে পারছেন না কেউই। বিক্ষোভ চলাকালীন হাওড়া ময়দানে দেখা যায়, একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পেটে হাত দিয়ে যন্ত্রণায় কোঁকাতে কোঁকতে মেট্রো স্টেশনে ট্রেন ধরতে ঢুকছেন।

তিনি সাংবাদিকদের কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাঁর স্বামী জানান, স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। কিন্তু কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাননি তাঁরা। অ্যাম্বুল্যান্স যাওয়ার রাস্তাও নেই। তাই বাধ্য হয়ে আসন্নপ্রসবা স্ত্রীকে নিয়ে মেট্রো চড়তে বাধ্য হন তিনি। হাওড়ার বকুলতলা থেকে মেডিক্যাল কলেজে যাচ্ছিলেন শিবাজি সামন্ত।

তিনি বলেন, ‘দিদা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। কিন্তু হাওড়া ব্রিজের মুখে আটকে দিল পুলিশ। একজন পুলিশ বলছে মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিতে ছাড়া হবে, আর একজন বলছে তাতেও ছাড়া হবে না।’ হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে একদিন আগেই নির্দেশিকা দিয়ে বলে দেওয়া হয়েছিল হাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনও গাড়িকে কলকাতা ঢুকতে হলে ১০ কিলোমিটার দূরে বালির নিবেদিতা সেতু হয়ে যেতে হবে।

সকাল আটটা পর্যন্ত কয়েকটি সরকারি বাস ও প্রাইভেট গাড়ি হাওড়া ব্রিজ হয়ে কলকাতার দিকে এলেও তার পর থেকেই যান নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়ে যায়। ৯টার পর পুরোপুরি ব্যারিকেড লাগিয়ে সিল করে দেওয়া হয় হাওড়া ব্রিজ। হাওড়া থেকে যারা কলকাতা যেতে চান তাদের জন্য হাওড়া ব্রিজের উপরের রাস্তা খুলে দেওয়া হলেও কলকাতা থেকে হাওড়া আসার জন্য ব্যবহার হয় শুধু ফুটপাথ। এগারোটার পর থেকে সেই ফুটপাথ দিয়ে চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।

ফলে হাওড়া ব্রিজে ওঠার গাড়িগুলিকে কলকাতার বাবুঘাট, টি বোর্ড, মহাত্মা গান্ধী রোডের মুখে এবং গিরিশ পার্কের কাছে আটকে দেওয়া হয়। এই অংশ থেকে যারা হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে যান বা অফিসে যান তাঁদের পুরো রাস্তা হেঁটে হাওড়া পৌঁছতে হয়। হাওড়া ময়দান, সালকিয়ার বাসিন্দাদের হাওড়া ময়দান পর্যন্ত যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নবান্নের পাশাপাশি প্রায় সব রাস্তাই পাকাপোক্ত ব্যারিকেড দিয়ে এমনভাবে আটকে দেওয়া হয় যে হেঁটে যাওয়ারও উপায় ছিল না।

জিটি রোড, ফোরশোর রোড, আন্দুল রোড, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, লক্ষ্মীনারায়ণতলা রোড-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এমনকি বিদ্যাসাগর সেতুতেও যান চলাচল ও পায়ে হেঁটে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। আটকে পড়ে বহু অ্যাম্বুল্যান্স। তাদের বেশিরভাগই দীর্ঘ রাস্তা ঘুরে বালির নিবেদিতা সেতু হয়ে কলকাতায় ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তাতেও যানজট তৈরি হয়েছে। অনেকেই হাসপাতালে বা অফিসে পৌঁছতে পারেননি।

নবান্ন অভিযান, হাওড়ায় কার্যত পরিবহণ ‘ধর্মঘট’

জলপথে সকালের দিকে সামান্য লঞ্চ পরিষেবা থাকলেও সড়কপথে হাওড়া ও কলকাতা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দূরপাল্লার টিকিট থাকা সত্ত্বেও বহু যাত্রী হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতেই পারেননি। হাজার হাজার মানুষ হাওড়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নামার পর গাড়ি পাননি। তবে নিত্যযাত্রীদের কিছুটা সুরাহা দিয়েছে হাওড়া মেট্রো। সকাল থেকেই মেট্রোয় ছিল প্রচণ্ড ভিড়। বিক্ষোভকারীদের সড়কপথে আটকানো হলেও অনেকে মেট্রোরেলে হাওড়া ও ময়দানে নেমে নবান্ন অভিযানে যোগদান করেন।

মঙ্গলাহাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু জানা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ভিন রাজ্য ও দূরের জেলা থেকে জিনিসপত্র নিয়ে হাটে রওনা দিয়েছিলেন। পুলিশ ভোরের দিকে তাদেরও সরিয়ে দেয়। পুজোর আগে একটা মঙ্গলবার হাট বন্ধ থাকা মানে প্রায় ১০০ কোটি টাকার উপর ক্ষতি বলে জানিয়েছেন মঙ্গলাহাট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজকুমার সাহা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version