অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
আছে অথচ নেই! এ যেন ভানুমতীর খেল! কাগজ-কলমে অস্তিত্ব আছে বটে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনও পরিকাঠামো নেই। এমনই অভিযোগ ‘ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ প্রজেক্ট নিয়ে। অন্তত, কেন্দ্র ও রাজ্য বন দপ্তরের চিঠি চালাচালিতে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে উঠে এসেছে। ২০০২ সালে রাজ্যের বন দপ্তর নোটিফিকেশন জারি করলেও ওই প্রকল্পের পরিকাঠামোগত কাজ এখনও বিশবাঁও জলে! অথচ ২০২২ সালে রাজ্য বন দপ্তরের পাঠানো এক চিঠিতে দাবি করা হয়, ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।ঝাড়গ্রামে হাতিহত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে ‘জঙ্গলমহল স্বরাজ মোর্চা’ ইতিমধ্যে, পথসভা করে এ বিষয়ে রাজ্য বন দপ্তরের কাছে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশের দাবি করেছে।

‘ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ কী?
জঙ্গলমহলের হাতি সমস্যা সমাধানের জন্য হাতিদের জন্য একটি এলাকা সংরক্ষিত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০২ সালের ২৪ অক্টোবর রাজ্যের বন দপ্তর ‘ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ নিয়ে একটি নোটিফিকেশন জারি করে। তাতে উল্লেখ করা ছিল, কেন্দ্রের ‘প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট’ স্কিমের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত করা হবে। যার ফলে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় হাতি সমস্যার সমাধান করা যাবে।

এ জন্য বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ির ব্লকের ময়ূরঝর্ণা সমেত বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ৪১৪ বর্গকিমি জঙ্গল চিহ্নিত করা হয়। ‘ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ প্রজেক্টের উত্তর দিকে পুরুলিয়া জেলার মানবাজার ব্লক ও বাঁকুড়া জেলার সিমলি ব্লক। দক্ষিণে ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর ব্লক ও বাঁকুড়া জেলার রাইপুর ব্লক।

পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দলমা এলিফ্যান্ট স্যাংচুয়ারি এবং পুব দিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড় ও শালবনি ব্লক। বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনের ১৯৭২ সালের নিয়ম অনুসারে ‘ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বতন্ত্র ‘ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ প্রজেক্টের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। জঙ্গলমহলের জ্বলন্ত হাতি-মানুষের সমস্যা নিয়ে ২০২২ সালে তৎকালীন ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রমের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রীকে দাবি সনদ পাঠিয়েছিল ‘জঙ্গলমহল স্বরাজ মোর্চা’।

এমনকী, বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের ৯ ফ্রেবুয়ারি পার্লামেন্টে ওই সময় সাংসদ কুনার হেমব্রম প্রশ্নও তুলেছিলেন। তারপরই কেন্দ্র ‘প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট’ বিষয়টি নিয়ে রাজ্য বন দপ্তরের বন্যপ্রাণ শাখার কাছে মতামত জানতে চায়। ওই প্রশ্নের উত্তরে ২০২২ সালের ১৮ ফ্রেবুয়ারি রাজ্যের কনজারভেটর অফ ফরেস্ট ওয়াইল্ডলাইফ(হেড কোয়ার্টার) শৈলেশ এস আনন্দ ‘প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট’কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলায় ‘ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ প্রজেক্ট রয়েছে।

চিঠিতে এলিফ্যান্ট রিজার্ভ প্রসঙ্গে ‘এক্সিস্টিং অ্যান্ড এসট্যাব্লিশড’ শব্দ দু’টি লিখেছিলেন তিনি। অথচ বাস্তবে মোটেও হাতিদের জন্য কোনও সংরক্ষিত এলাকা সেখানে গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ জঙ্গলমহল স্বরাজ মোর্চার। এ নিয়ে শৈলেশ এস আনন্দকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ওই পোস্টে নেই। যার ফলে বিষয়টি আমি এখন বলতে পারব না।’

২০১৬ সালের ১০ মার্চ ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভের জন্য নতুন ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন (সাউথ) গঠনের নোটিফিকেশন জারি করেছিল রাজ্য সরকার। ওই সময় থেকে নতুন ওয়াইল্ডলাইফ ডিভিশন(সাউথ) তৈরি করার তোড়জোড় শুরু হয়। এমনকী, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া ডিভিশনের কোন কোন এলাকা নিয়ে তা গঠন করা হবে, সে বিষয়ে নোটিসে উল্লেখও করা হয়েছিল।

এমনকী, ওই ওয়াইল্ডলাইফ ডিভিশন(সাউথ) দপ্তরে কোন কোন অফিসার দায়িত্ব পাবেন, তাও উল্লেখ করা হয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত বনকর্তা সমীর মজুমদার বলেন, ‘২০১৬ সালে ওয়াইল্ডলাইফ ডিভিশন(সাউথ)-এর এডিএফও পদে আমাকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ওয়াইল্ডলাইফ ডিভিশন(সাউথ)-এর নতুন অফিস তৈরি হয়নি এবং আমিও নতুন দায়িত্ব পাইনি।’ অর্থাৎ কাগজে-কলমে থাকলেও কার্যক্ষেত্রে সেখানে কিছু গড়েই ওঠেনি।

Jhargram Elephant Death: হুলা নিষিদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা হাতি-হত্যার ঘটনায় তবু নাম হুলাপার্টির

‘জঙ্গলমহল স্বরাজ মোর্চা’র কেন্দ্রীয় সভাপতি অশোক মাহাতো বলেন, ‘বন দপ্তর কেন্দ্রকে জানাচ্ছে, ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ প্রজেক্ট রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্ব নেই। আর যদি ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ থাকে, তা হলে জঙ্গলমহলে হাতি-মানুষের সমস্যার সমাধান কেন হচ্ছে না? ওই সংরক্ষিত এলাকায় কেন হাতি থাকছে না? কেন বিভিন্ন এলাকায় হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে?’

যদিও রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল(বন্যপ্রাণ) দেবল রায় দাবি করেছেন, রাজ্যে দু’টি এলিফ্যান্ট রিজার্ভ আছে। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের দু’টি এলিফ্যান্ট রিজ়ার্ভের মধ্যে একটি দক্ষিণবঙ্গের ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজ়ার্ভ অন্যটি ইস্টার্ন ডুয়ার্স এলিফ্যান্ট রিজ়ার্ভ। দু’টিই রাজ্যের স্বীকৃত এলিফ্যান্ট রিজ়ার্ভ। এ বিষয় নিয়ে কোনও রকম বিতর্ক নেই। বন দপ্তর সঠিক দেখভাল করছে এবং সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version