এই সময়: পুলিশে চাকরি করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দু’জনই — তাপস চৌধুরী ও সৌরভ দত্ত। সৌরভের মৃত্যু নিয়ে আবার রহস্যও রয়েছে। তাঁর মেয়েকে পুলিশেই চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আরজি কর কাণ্ডের পরে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা সৌরভের স্ত্রী ঝর্ণা ভট্টাচার্যর দাবি, এই আবহে তিনি মেয়েকে পুলিশে চাকরি করতে দিতে চান না। আর তাপসের স্ত্রী মিনতি চৌধুরীর দাবি, ‘নেতা-মন্ত্রীদের গায়ে তো কখনও গুলি লাগে না। মারা যান সাধারণ মানুষ, সাধারণ পুলিশকর্মীরা।’গত বছরই রহস্যজনক ভাবে মারা যান কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট সৌরভ। তাঁর স্ত্রী ঝর্ণার দাবি, সৌরভের মৃত্যুর পরে কলকাতা পুলিশে মেয়ের চাকরির ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘এই আবহে মেয়েকে কী ভাবে চাকরিতে পাঠাবো?’

ঝর্ণার অভিযোগ, ‘আত্মহত্যা’ বলে সৌরভের মৃত্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর মৃত্যুর পিছনে কে বা কারা ছিলো, তা আজও জানা যায়নি। ফলে, সেই বাহিনীতেই মেয়ের চাকরি করা নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাঁর। ঝর্ণার কথায়, ‘আরজি করের মতো ঘটনা আর যাতে না-ঘটে, বরং সেই চেষ্টাই করা হোক।’

গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদের ভোটের গন্ডগোল সামলাতে গিয়ে ২০১৩-র ১৩ ফেব্রুয়ারি দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের সাব-ইন্সপেক্টর তাপস। সম্প্রতি বিজেপির ডাকা নবান্ন অভিযানের দিন বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে চোখে মারাত্মক লাগে সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তীর। জখম হন অন্তত জনা পঁচিশেক পুলিশ।

দৃষ্টির উন্নতি আহত সার্জেন্ট দেবাশিসের, হামলায় গ্রেপ্তার ৩
সেই প্রসঙ্গে তাপসের স্ত্রী মিনতির বক্তব্য, ‘গুলি তো লাগে সাধারণ মানুষ, সাধারণ পুলিশকর্মীদের। নেতা-মন্ত্রীদের গায়ে তো লাগে না।’ তিনি জানিয়েছেন, উপরমহলের নির্দেশে সাধারণ পুলিশ কর্মীরা গন্ডগোল থামাতে যান। তাঁর অনুরোধ, যতই নির্দেশ থাক, আত্মরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁরা যেন ঝামেলা সামলাতে ঝাঁপিয়ে না পড়েন। নিজেদের বাঁচিয়ে কাজ করেন। মিনতির কথায়, ‘একজন পুলিশ বাড়ি থেকে কাজে বেরোলে তাঁর ঘরে ফেরার অপেক্ষা করেন স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা। আমি হারানোর যন্ত্রণা জানি।’

আরজি করের কর্মরত চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা সমাজকে। রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষ। তার মাঝেই একদিন একটি মিছিল এবং পরে ‘ছাত্র সমাজ’-এর ডাকে (যেটি বিজেপি-র মস্তিষ্কপ্রসূত বলে অভিযোগ) নবান্ন অভিযান সামলাতে গিয়ে আহত হয়েছেন পুলিশ কর্মীরা। গুরুতর জখম হয়ে তাঁদেরই কেউ কেউ হাসপাতালেও ভর্তি।

এই অবস্থায় পুলিশের শীর্ষস্তরে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে সমাজ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে বাহিনীকে। শাসকের মুখ হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। আর আত্মরক্ষায় পুলিশ বহুক্ষেত্রে পাল্টা ঢিলের রাস্তায় গিয়ে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিচ্ছে। এ বার পুলিশকর্মীদের পরিবার থেকেই উঠতে শুরু করল প্রশ্ন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version