সেটাও ছিল এমনই এক সেপ্টেম্বর। তখন পুরোদমে চলছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে একের পর এক জাহাজ ভিড়ছে কলকাতা বন্দরে। গুরুতর আহত সৈন্যদের জাহাজে করে আনা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি বিশেষ স্বাস্থ্য শিবিরও করা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসার পরিকাঠামো কোথায়? চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল, বারবার জানানো সত্ত্বেও হাত গুটিয়ে বসেছিল ব্রিটিশ সরকার।ফলে, আহত সেনা জওয়ানদের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছিল চিকিৎসকদের। শেষ পর্যন্ত ১৩ সেপ্টেম্বর ধর্মঘট শুরু করেন চিকিৎসকরা। ব্রিটিশ জমানায় সেটাই প্রথম চিকিৎসক ধর্মঘট। ‘দ্য স্টেট্‌সম্যান’ লিখেছিল, ‘হেল্‌থ সার্ভিস ইন রেস্ট’। ধর্মঘটী ডাক্তারদের স্লোগান ছিল, ‘গভর্নমেন্ট অন হলিডে ইন দ্য টাইম অফ ওয়ার।’ সেই ধর্মঘট চলেছিল সাত দিন। তাতে সামিল হয়েছিলেন ব্রিটিশ ডাক্তাররাও।

বর্তমানে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি মাস পেরিয়েছে। যদিও স্বাধীন ভারতে এটাই প্রথম চিকিৎসক ধর্মঘট নয়। ২০১৯ তো বটেই, তারও আগে অনেক বারই ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন চিকিৎসকরা। শুধু এ দেশে নয়, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকরা ধর্মঘট করেছেন। গত বছরের শুরুতেই ব্রিটেনে ধর্মঘটে সামিল হন ২৫ হাজার চিকিত্‍সক, তাঁদের সঙ্গে লক্ষাধিক স্বাস্থ্যকর্মী।

RG Kar Incident: ‘বৈঠক বসতে রাজি আছি’, কী জানালেন জুনিয়র চিকিৎসকরা?

ব্রিটেনে একবার ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে এক মন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় হাতাহাতির উপক্রম হয়েছিল চিকিৎসকদের। ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের সমাজসেবামন্ত্রী (তখন স্বাস্থ্যের আলাদা মন্ত্রক তৈরি হয়নি) বারবারা ক্যাসল ঘোষণা করেন যে, সরকারি চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। ওই ঘোষণার প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করেন সিনিয়র চিকিৎসকরা।

ধর্মঘট মাস খানেক গড়াতেই বারবারা ঘোষণা করেন, যে-সব চিকিৎসক পার্টটাইম সরকারি চাকরি করবেন, সেই সব চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন। তাঁর ওই ঘোষণার পর ধর্মঘটে সামিল হন জুনিয়র চিকিৎসকরাও। শেষ পর্যন্ত প্রাইভেট প্র্যাকটিস সংক্রান্ত ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার। সে বছরই নভেম্বরে বেতন বৃদ্ধি-সহ একাধিক দাবিতে ফের কর্মবিরতির পথে হাঁটেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেটা চলেছিল এক মাস। আবার বিশ্বের ইতিহাসে ডাক্তারদের কর্মবিরতি সব চেয়ে বেশি সময় ধরে চলেছিল ২০০১ সালে, ফিনল্যান্ডে। পাঁচ মাসের বেশি চলেছিল সেই কর্মবিরতি।

কোন কোন জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে আসছেন? রিপোর্ট তলব স্বাস্থ্য ভবনের
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে ভারতে কমবেশি ২২টি রাজ্যে ৩৬ বার কাজ বন্ধ করেছেন চিকিত্‍সকরা। তবে ইমারজেন্সি পরিষেবা বন্ধ হয়নি। ২০১৯ সালে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক জুনিয়র ডাক্তারের উপর হামলা করেছিল রোগীর পরিবার। প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করেন ওই হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। এনআরএসের ঘটনার প্রতিবাদে দেশের নানা রাজ্যে দফায় দফায় কর্মবিরতি করেছিলেন চিকিত্‍সকরা। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বেরিয়েছিল সমাধানসূত্র।

তবে ১৯৮৩ সালে তত্‍কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা, কথাবার্তার ধার ধারেননি বলে অভিযোগ। সে বারও নিরাপত্তা-সহ একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্‍সকরা। মার্চে আন্দোলন শুরু হয়ে গড়িয়েছিল অক্টোবরে। তবে চিকিৎসা পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। শেষ পর্যন্ত অক্টোবরের এক রাতে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ঢুকে পুলিশ লাঠিচার্জ করে চিকিত্‍সকদের উপর। সেই ঘটনায় ২৮ জন চিকিত্‍সক গুরুতর আঘাত পান বলে চিকিত্‍সক সংগঠন দাবি করেছিল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version