এই সময়: আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার এক দিনের মধ্যেই প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। এই গ্রেপ্তারকে নিজেদের বড়সড় সাফল্য বলেও দাবি করেছিল তারা।আর সেই সঞ্জয়ের গ্রেপ্তার ঘিরেই এ বার একাধিক গাফিলতির অভিযোগ আনল সিবিআই। তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন সঞ্জয় যে জামাকাপড় পরে পাশবিক ঘটনা ঘটায় এবং তার সঙ্গে যে আনুষাঙ্গিক সামগ্রী ছিল, তা বাজেয়াপ্ত করতে লেগে যায় প্রায় ২ দিন! সিবিআইয়ের প্রশ্ন, একজন মূল অভিযুক্ত, যার জামাকাপড় থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তা বাজেয়াপ্ত করতে কেন এত সময় লাগল পুলিশের? তদন্তকারীদের প্রশ্ন, তবে কি তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে ‘সময়’ দেওয়া হয়েছিল?

এত বড় একটি অপরাধে টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল কেন পর পর ভুল করে গেলেন, তাও খতিয়ে দেখতে চান তদন্তকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন, ওসি কি হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কথাতেই ওই ভুল করেছিলেন? নাকি নির্দেশ এসেছিল বাহিনীর উপরতলা থেকে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা আইন অনুযায়ী ঘটনাস্থলের ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়নি বলেও দাবি করছে সিবিআই।

রবিবার শিয়ালদহ আদালতে পুলিশের তদন্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সিবিআইয়ের তরফে তথ্যপ্রমাণ লোপাটেরও ঈঙ্গিত করা হয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, কাল, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানিতেও তদন্তে গাফিলতি ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের এই অভিযোগ তোলা হবে। জানানো হবে, মূলত এই অভিযোগেই শনিবার টালা থানার প্রাক্তন ওসিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, শীর্ষ আদালতে জানানো হবে, একই অভিযোগ উঠে এসেছে সন্দীপের বিরুদ্ধেও। বলা হবে অভিজিৎ-সন্দীপের আঁতাঁতের কথাও।

আরজি করের সেমিনার রুমে গত ৯ অগস্ট উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ। এর পরে ভাইরাল ভিডিয়োতে (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) ওই ঘরে সন্দীপের ঘনিষ্ঠদের দেখা যায়। যেখানে পুলিশ এবং ফরেন্সিক দলের সদস্য ছাড়া কারও থাকার কথা নয়, সেখানে এত ভিড় কোথা থেকে এল? কারা সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিলেন? অভিযোগ আকারে এ প্রশ্নগুলোও শীর্ষ আদালতের সামনে তুলে ধরা হতে পারে সিবিআইয়ের একাংশের দাবি।

উল্লেখ্য, এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে লালবাজার দাবি করেছিল— ঘটনাস্থল ঘিরে (কর্ডন) রাখা ছিল। তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়নি। কলকাতা পুলিশের সেই দাবি এ বার কার্যত খারিজ করে দিয়েছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ‘সিন অফ ক্রাইম’ (এসওসি) প্রোটেক্ট করতে ব্যর্থ পুলিশ। ওই জায়গায় যাঁদের ঢোকার অনুমতি ছিল না, তাঁরাও ঢুকে পড়েছিলেন। তার ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, দেহ উদ্ধারের পর থেকে টালা থানার পুলিশ একের পর এক ‘ভুল’ করে গিয়েছে। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা এটাও খতিয়ে দেখছেন যে, এই ভুল কি ইচ্ছাকৃত? নাকি কারও নির্দেশে তদন্ত প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হয়েছিল? কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গত এক মাস ধরে তদন্ত চালিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মী-চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি পুলিশের একাংশেরও বয়ান নিয়েছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। কথা বলেছেন, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে।

RG Kar Incident: তিলোত্তমা কাণ্ডে জোড়া গ্রেপ্তারি, সন্দীপের সঙ্গে সিবিআই জালে টালা থানার ওসি

সিবিআইয়ের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘ষড়যন্ত্র’ করে ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার সংক্রান্ত জেনারেল ডায়েরিতে (জিডি নম্বর: ৫৪২) ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সন্দীপ এবং অভিজিৎ-কে জেরা করে তথ্য পেতে চাইছেন গোয়েন্দারা। জিডি করার আগে চিকিৎসকেরা তরুণীকে পরীক্ষা করেছিলেন। ১০টা ৩ মিনিটে সেমিনার রুমে তরুণীর দেহ পড়ে থাকার কথা জানতে পারেন অভিজিৎ।

তারও প্রায় ৫ ঘণ্টা পর ২ টো ৫৫ মিনিটে এমএসভিপি অভিযোগ জানান। ময়নাতদন্তের পরে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে অভিযোগ করেন নির্যাতিতার বাবা। এত কিছু পরেও রাত সাড়ে এগারোটায় টালা থানায় শুধু একটি জিডি হয়। এর পরে এফআইআর করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা দেরি হয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version