পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
চিরাচরিত শাড়ি নয়, এখানে দেবীদের পরনে থাকে ট্র্যাডিশনাল বোড়ো পোশাক ‘দোখোনা’। আর ধুতির বদলে কার্তিক-গণেশ এবং অসুরকে পরানো হয় বোড়ো গামছা। আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের দক্ষিণ সাতালির প্রত্যন্ত বোড়ো গ্রামের পুজো এখানেই আর পাঁচটা পুজোর থেকে আলাদা।বোড়ো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। গ্রামের মহিলারাই পুজোর আয়োজন করেন। তাঁদেরই বহু বছর আগে তৈরি করা নিয়মে শাড়ির বদলে দেবী দুর্গা আর তাঁর দুই কন্যে লক্ষ্মী-সরস্বতীর অঙ্গে ওঠে এই ‘দোখোনা’। আর কার্তিক-গণেশ ও অসুরকে লুঙ্গির মতো করে বোড়ো গামছা পরানো হয়। গ্রামে আরও একটি নিয়ম কঠোর ভাবে পালন করা হয়। দেবীদের নিজে হাতে ‘দোখোনা’ পরান গ্রামের মহিলারা।

আর অসুর ও দেবতাদের গামছা পরানোর দায়িত্বে থাকেন গ্রামের পুরুষরা। সাজসজ্জার এই নিয়ম এক চুল এ দিক-ও দিক হওয়ার উপায় নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বোড়োদের দুর্গাপুজোর একাধিক আচারে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তবু সাবেকি এই প্রথাকে ধরে রেখেছেন মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই। গত ৫৫ বছর ধরে নিয়মে পালনে কোনও ব্যতিক্রম হয়নি আলিপুরদুয়ারের ওই প্রত্যন্ত গ্রামে।

তবে প্রথম দিকে দোখোনা তৈরি হতো গ্রামেই। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে অসম থেকে আনা হয় দোখোনা আর বোড়ো গামছা। কারণ বোড়োদের ট্র্যাডিশনাল তাঁতের মাকু এখন উত্তরবঙ্গের মাটি থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছে।

এ বছরও মাস খানেক আগে গঠিত হয়েছিল পুজো কমিটি। কমিটির কোষাধ্যক্ষ অনিন্দিতা শৈব বলেন, ‘হয়তো কালের নিয়মে আমাদের সমাজে কোনও কোনও জায়গায় ধর্মীয় রীতিনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আমরা এই গ্রামে এখনও নিষ্ঠাভরে সব কিছু পালন করছি। পরের প্রজন্ম এই আচারগুলো কতটা ধরে রাখবে, তা বলা কঠিন। তবে আমরা যতদিন আছি, কোনও অনিয়ম হবে না আমাদের গাঁয়ে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version