প্রশান্ত ঘোষ, ভাঙড়
একটানা বৃষ্টিতে ফুলে পচন ধরেছিল। নিম্নচাপের দাপটে গাছ মাটিতে হেলে পড়েছিল। তাই লাভের আশায় জল ঢেলে লোকসানের বহর বেড়েছিল। সেই হতাশা কাটিয়ে লাভের মুখ দেখলেন ভাঙড়ের ফুলচাষিরা। কোজাগরী লক্ষ্মীর হাত ধরে মা লক্ষ্মী এলেন ভাঙড়ের ফুলচাষিদের ঘরে। অন্যান্য বছর যে ফুলের মালা সাধারণত পাঁচ থেকে সাত টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়, সেই মালাই এ বার বিক্রি হলো তিন গুণ দরে।ভাঙড়ের ফুলচাষি অসীম রায় বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস ও জন্মাষ্টমীতে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া থাকায় ফুলের এতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তখন বাজারদরও ভালো ছিল। এক কুড়ি (২০টি মালার গোছা) মালা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পাইকারি বিক্রি হয়েছিল। মানে এক একটি মালার দাম ছিল তিরিশ থেকে চল্লিশ টাকা।’ কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজো আর দুর্গাপুজোয় লাগাতার বৃষ্টি হওয়ায় ফুলে পচন ধরেছিল, অনেক চাষি আবার ভালো দাম পাননি।

শিখরপুরের চাষি স্বপন নস্কর বলেন, ‘লক্ষ্মীপুজোর আগে লাল গাঁদা বিক্রি হলো ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। বাসন্তী রঙের গাঁদার দাম ৫০০ টাকা। বুধবার এই দাম আরও বাড়বে।’ তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভাঙড়ের ফুলচাষিরা ফুল তোলার কাজ শুরু করেছেন পুরোদমে। তবে দাম বাড়লেও লাভের অঙ্ক নিয়ে সন্দিহান ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ তুহিনা বিবি।

তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে প্রচুর ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। তা ছাড়া মালা গাঁথার জন্য সুতুলি, সুচ কিনতে হয়। মালাপিছু এক টাকা করে মজুরি নেন যারা মালা গাঁথেন। এর বাইরে ফুল তোলা, বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচাও আছে।’ তবে আবহাওয়া ভালো হওয়ায় আপাতত খুশি ভাঙড়ের চাষিরা।

বানিয়াড়া গ্রামের ফুলচাষি কৃষ্ণপদ মণ্ডল বলেন, ‘বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শুরু করে কালীপুজো পর্যন্ত ভালো বাজারদর থাকে গাঁদা ফুলের।’ উপযুক্ত পরিবেশ আর উর্বর মাটির জন্য ভাঙড়ের কচুয়া, চাঁদামারি, রাজাপুর, পাখিমারা, শানপুকুর, রঘুনাথপুর, বানিয়াড়া, লাঙলবেঁকি গ্রামে বিঘার পর বিঘা জমিতে ফুল চাষ হয়। ক্যানিং পূর্বের আম্রেশ্বর, মৌলি মুকুন্দপুর, চন্দনেশ্বর, শাকশহর, বোদরা এলাকায় মাঠ ভর্তি গাঁদাফুলের দেখা মিলছে এ সময়।

আবার রাজারহাটের চাঁদপুর, পাথরঘাটা, জগদীশপুর, শিখরপুরেও মাঠ ভরেছে লাল, হলুদ গাঁদায়। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে সেই ফুল ফড়েদের হাত ধরে হাওড়ার মল্লিকহাট, শিয়ালদহ বাজারে গিয়েছে। অনেকে আবার দমদম, বাগুইআটি, নিউ টাউন, দক্ষিণ বারাসতেও ফুল নিয়ে বিক্রি করেন। পুজোর মরশুমে গাঁদাফুলেই লক্ষ্মী লাভ করছেন ভাঙড়ের চাষিরা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version