এই সময়: দানার জন্মের আগে থেকেই তার তুলনা চলছিল দেড় দশক আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট তীব্র ঘূর্ণিঝড় আয়লার সঙ্গে। সেই তুলনাটা চলছিল মূলত তার শক্তির নিরিখে। আবহবিদদের পূর্বাভাস ছিল, আয়লার মতো দানাও হবে তীব্র ঘূর্ণিঝড় এবং তার জেরে ঝড়ের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটারে পৌঁছতে পারে। কিন্তু চিন্তা ছিল, দানার গতিপথ কী হবে এবং শেষমেশ তার ল্যান্ডফল কোথায় হবে? তবে বুধবার দানার জন্মের পরে তার সর্বশেষ গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে আবহবিদদের বক্তব্য, বাংলার কান ঘেঁষে বেরিয়ে যাচ্ছে এই তীব্র ঘূর্ণিঝড়।মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার উপ-মহাধ্যক্ষ সোমনাথ দত্ত এ দিন জানান, আজ, বৃহস্পতিবার বেশি রাত থেকে শুরু করে কাল, শুক্রবার ভোরের মধ্যে ওডিশার ভিতরকণিকা এবং ধামরা বন্দরের মাঝে ২০-২৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দিয়ে ‘দানা’ ল্যান্ডফল করতে চলেছে। ফলে ২০০৯-এ আয়লার ধাক্কায় যে ভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল সুন্দরবন, এ বার সেটা হচ্ছে না বলেই মনে করছেন আবহবিদরা। তবে ওডিশার মতো প্রভাবিত না-হলেও আজ ও আগামিকাল দক্ষিণবঙ্গের বিশেষ করে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ‘ভারী’ থেকে ‘চরম ভারী’ বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে থাকবে ঝোড়ো হাওয়ার দাপটও।

বুধবার সকালে বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণিঝড় দানা দিনের বেশির ভাগ সময় ধরে ঘণ্টায় ১২-১৩ কিলোমিটার গতিতে এগিয়েছিল উত্তর-পশ্চিম দিক বরাবর। এ দিন সকাল থেকেই মৌসম ভবন ও আলিপুর হাওয়া অফিসের আবহবিদরা একাধিক ওয়েদার মডেলে নজর রেখেছিলেন ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ট্র্যাজেক্টরির হিসেব কষতে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফলের এলাকা এবং সময়ের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টো বিষয় সম্পর্কে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছু জানায়নি মৌসম ভবন।

বুধবার দুপুরেই সেই ধোঁয়াশা কাটে। ঘূর্ণিঝড় জন্ম নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার উপ-মহাধ্যক্ষ সোমনাথ দত্ত বলেন, ‘আমরা একেবারে শুরুর দিকে ল্যান্ডফলের সম্ভাব্য এলাকা হিসেবে পুরী থেকে সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী একটা বিরাট এলাকাকে চিহ্নিত করেছিলাম। তখনও সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হয়নি। আমরা প্রাথমিক হিসেব কষেছিলাম গভীর নিম্নচাপের ট্র্যাজেক্টরি অনুযায়ী। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পর আমরা ল্যান্ডফলের এলাকা নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত।’

তাঁর সংযোজন, ‘প্রাথমিক হিসেবের চেয়ে ট্র্যাজেক্টরি অনেকটাই উত্তর-পশ্চিমে ঘুরে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ওডিশার ভিতরকণিকা এবং ধামরা বন্দরের মাঝের ২০-২৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্য দিয়ে দানা ল্যান্ডফল করতে চলেছে।’ ল্যান্ডফলের সময়ে ঝড়ে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১২০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহবিদরা। বুধবার সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ দানা ধামরা বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।

দানার প্রভাবে আজ, বৃহস্পতিবার এবং আগামিকাল, শুক্রবার পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা এবং হুগলি ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার কোথাও ভারী বৃষ্টি (৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার), কোথাও ‘অতি ভারী’ বৃষ্টি (৭ থেকে ২০ সেমি) এবং কোথাও কোথাও ‘চরম ভারী’ বৃষ্টি (২০ সেমির বেশি) বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। ‘ভারী’ থেকে ‘অতি ভারী’ বৃষ্টি হতে পারে কলকাতাতেও। প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবার সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বাতাসের সর্বোচ্চ বেগ পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারে।

চিন্তা ‘দানা’ বাঁধছে মন্দ গতির জন্য

মে মাসে এই বঙ্গোপসাগরেই তৈরি হয়েছিল আরও একটি ঘূর্ণিঝড় রেমাল। পাঁচ মাসের মাথাতেই বঙ্গোপসাগরে ফের দানার জন্ম। এই নজির কি জলবায়ুর ক্রমশ চরমভাবাপন্ন হয়ে ওঠারই লক্ষণ?

এই প্রসঙ্গে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘বঙ্গোপসাগরে গত ২০০ বছরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের দৌলতে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। তবে এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় তৈরির প্যাটার্ন বদলায়নি। সংখ্যাও যে বেড়েছে, এমন কথা বলা যায় না।’ আবহবিদরা জানাচ্ছেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর — বছরের শেষ তিন মাস বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল থাকে বলেই এই তিন মাসকে ‘সাইক্লোন সিজ়ন’ বলা হয়। এই কারণেই মে-তে রেমাল এবং তার পর অক্টোবরে দানা — এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version