তথাগত চক্রবর্তী: ঘটনা বারুইপুরের (Baruipur)। বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বারুইপুরের সন্ন্যাসী কর্মকার ও তাঁর স্ত্রী ঝর্ণা কর্মকার। স্ত্রী সেই বিষ খেয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। আর তিনি? ৭০ বছরের বৃদ্ধ সন্ন্যাসী কর্মকার তাঁর জীবনের এই শেষ অধ্যায়ে আর ফিরতে চান না ছেলের কাছে। কারণ? মারধর, অপমান, অবহেলা, আর সব হারানোর যন্ত্রণা।
সন্ধ্যায় স্টেশনে বিষ
গত শনিবার সন্ধ্যায় বারুইপুর স্টেশনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন সন্ন্যাসীবাবু ও তাঁর স্ত্রী। অসুস্থ অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে বারুইপুর জিআরপি। চিকিৎসার মাঝেই মৃত্যু হয় ঝর্ণাদেবীর। সন্ন্যাসীবাবু ধীরে ধীরে সুস্থ হন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও বাড়ি ফিরতে চান না তিনি। সোজাসাপটা জানিয়ে দেন, ‘ছেলের কাছে যাব না। আমাকে হোমে পাঠান। বাকি জীবনটা একটু শান্তিতে কাটাতে দিন।’ জানা গিয়েছে, গড়িয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁদের পুরনো বাড়িটি জোর করে বিক্রি করে দেয় ছেলে ও পুত্রবধূ। মারধর করে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয় তাঁদের। জোর করে নিয়ে নেওয়া হয় সমস্ত টাকাপয়সাও। এর পর নবদ্বীপে পাঁচ মাস কোনও রকমে কাটিয়ে, হতাশা আর অসহায়তায় এই বিষ খাওয়ার সিদ্ধান্ত।
ঘরে নয়, হোমে
হাসপাতালের ফ্যাকাল্টি ম্যানেজার শ্যামল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সন্ন্যাসীবাবু লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তিনি হোমে যেতে চান। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিস প্রশাসনকেও জানানো হবে। এই অবস্থায় আত্মীয়রাও ছেলের ভয়ে মুখ ঘোরাচ্ছেন। তাই হাসপাতালই এখন একমাত্র ভরসা বৃদ্ধের কাছে। সন্ন্যাসীবাবু কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি। বলেন, ওঁরাই আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। এখন শুধু চাই, হোমে গিয়ে বাকি দিনগুলি একটু শান্তিতে কাটাতে।
নিঃশব্দ প্রশ্ন
একটা সমাজ, একটা পরিবার আর একটা সিস্টেম– সব কিছুর কাছে যেন এক নিঃশব্দ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সন্ন্যাসী কর্মকার। তাঁর জীবনের শেষটা কীভাবে হবে, সেটাই এখন দেখার।
এবং জামা-কাহিনি
প্রসঙ্গত নদীয়ায় এক অন্য আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। দারিদ্রের কাছে হারস্বীকার এক এমএ পাস তরুণীর। অর্থের অভাবে নিজের পছন্দের জামা কিনতে না পারায় অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন ওই তরুণী। এই ঘটনার জেরে শোকের পরিবেশ চাকদা থানার চাদুরিয়া এলাকায়। কী ঘটেছিল? চাকদা থানার চাদুরিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মলিচাগড় গ্রামের বাসিন্দা এক যুবতীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তার নিজের ঘর থেকেই এই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার স্থানীয় একটি দোকানে ওই যুবতীর একটি জামা পছন্দ হয়। কিন্তু দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ওই যুবতীর মায়ের কাছে জামা কেনার জন্য পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তাঁর পছন্দের সেই জামাটি মেয়েকে কিনে দিতে পারেননি তিনি। শুক্রবার বিকেলে মাকে এক আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে ফাঁকা ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন ওই যুবতী। আজ, শনিবার মৃত ওই যুবতীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে চাকদা থানার পুলিস। ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
আপনি কি অবসাদগ্রস্ত? বিষণ্ণ? চরম কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনার হাত ধরতে তৈরি অনেকেই। কথা বলুন প্লিজ…
iCALL (সোম-শনি, ১০টা থেকে ৮টা) ৯১৫২৯৮৭৮২১
কলকাতা পুলিস হেল্পলাইন (সকাল ১০টা-রাত ১০টা, ৩৬৫ দিন) ৯০৮৮০৩০৩০৩, ০৩৩-৪০৪৪৭৪৩৭
২৪x৭ টোল-ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসন হেল্পলাইন– কিরণ (১৮০০-৫৯৯-০০১৯)
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)