অয়ন ঘোষাল: জারি অরেঞ্জ অ্যালার্ট (orange alert)। কমলা সতর্কতার অর্থ ‘বি প্রিপেয়ার্ড টু টেক অ্যাকশন’– মানে, সতর্ক থাকুন, যে কোনও সময়ে বিপদের মোকাবিলায় নামতে হতে পারে! কেন এমন অ্যালার্ট জারি করল ভারতীয় মৌসম ভবনের (India Meteorological Department) কলকাতার আবহাওয়া দফতর (Regional Meteorological Centre kolkata)? কারণ, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ধেয়ে আসছে তীব্র বৃষ্টি (intense rain)। বেলা দুটোর সময়ে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে হাওয়া অফিস। এর অর্থ, আগামী ৩ ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ, বিকেল পাঁচটার মধ্যেই আসছে ভয়াবহ বৃষ্টি!
বিজ্ঞপ্তি
ঠিক কী বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে? বলা হয়েছে– ‘আজ ২৫-০৭-২০২৫, ০১:৫০ মিনিট থেকে পরবর্তী ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় হুগলি, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাগুলির কিছু অংশে হালকা থেকে মাঝারি বজ্রপাতের সঙ্গে তীব্র বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।’
দিগন্তে ঝড়ের রোষনেত্র
এমনিতেই দিগন্তে ঝড়ের রোষনেত্রর খবর মিলেছে। জানা গিয়েছে বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে থেকে ঝড়ের বলয়টি ১৫০ কিমি দূরে অবস্থান করছে। বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলে। কোথায় আছে এখন ভয়াল বলয়টি? ক্যানিং থেকে মাত্র ৬০ কিমি দূরে! সেই হিসেবে দেখতে গেলে কলকাতার প্রায় ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে ঝড়টি। কলকাতার ১০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছে। গত ৩ ঘণ্টায় এই সাইক্লোনিক সিস্টেমটি প্রতি ঘণ্টায় ১৩ কিমি গতিতে এগিয়ে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কী হবে? আশঙ্কা এটি ক্রমশ পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে সরতে থাকবে। এর পাশাপাশি সন্নিহিত ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডেও এর প্রভাব পড়বে বলে মত আবহাওয়াবিদদের।
গহন শ্রাবণধারা
এদিকে তো বাংলা জুড়ে বর্ষা। কলকাতা থেকে কোচবিহার এক ছবি। পুরুলিয়ায় সকাল থেকে অবিরত বৃষ্টিপাত। গতকাল দুপুর থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আজও একটানা বৃষ্টি হচ্ছে জেলা জুড়ে। মানুষ প্রায় গৃহবন্দি। বৃষ্টির জেরে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। ফের বৃষ্টি ঝাড়গ্রামেও। এর জেরে চরম সমস্যায় সাধারণ মানুষ। যদিও গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরম থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া গিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সব্জির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানের ক্ষেত্রে বৃষ্টিটা সহায়ক হলেও সব্জির দাম কেজি প্রতি ৮০থেকে ১০০তে পৌঁছেছে। ঝাড়খণ্ডে অতিবৃষ্টির জেরে ফের নদীগুলি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গভীর নিম্নচাপের জেরে ভোর থেকেই আরামবাগে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। এক টানা বৃষ্টি হওয়ায় আরামবাগ শহর-সহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই জলযন্ত্রণায় পড়ে গিয়েছেন মানুষজন। জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। সকাল থেকে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে আরামবাগ মহকুমা-সহ আশপাশের এলাকাগুলিতে। এতে জল জমে বিপত্তি হয়েছে খোদ আরামবাগ শহরে। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড জলমগ্ন হওয়ায় নাজেহাল সাধারণ মানুষজন। এই অবস্থার মধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষকে। কখন এই জল সরবে, তা জানেন না বলেই মন্তব্য স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ভয়ংকর বৃষ্টি দার্জিলিংয়েও। কার্সিয়াংয়েও বিপুল বৃষ্টি। বজ্রপাতও বিপুল হচ্ছে এই এলাকায়। স্কুল বন্ধ। রাস্তায় লোক কম। জনজীবন ব্যাহত।
কয়েকসেকেন্ডের ঝড়
এদিকে এই বৃষ্টির খবরের মধ্যেই হঠাৎ করে কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল মেদিনীপুর শহর-সংলগ্ন ভালুকখুনিয়া গ্রামের একাংশ। শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল, কিন্তু সকাল দশটা নাগাদ হঠাৎই প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে সেখানে শুরু হয় ঝড়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কিন্তু তাতেই ভেঙে পড়ে একের পর এক গাছ, ভেঙে পড়ে একাধিক বিদ্যুতের খুঁটি, উড়ে যায় একাধিক বাড়ির টিনের ছাউনি। কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে তছনছ হয়ে যায় গোটা এলাকা। রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয় গ্রামবাসীদের মধ্যে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)