প্রদ্যুত দাস: জলপাইগুড়ির এক মফস্বল শহরের গৃহবধূ থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম শক্তিশালী মুখ-বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার (Begum Khaleda Zia) জীবন কাহিনি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়। ১৯৯১ সাল থেকে তিন দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত মহিলা সরকার প্রধান।

Add Zee News as a Preferred Source

খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালে, অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়িতে। খালেদার ডাক নাম ছিল পুতুল (Khaleda Zia’s nickname Putul)। দুধে আলতা গায়ের রং। বাবা ইসকান্দার আলি মজুমদারের চায়ের ব্যবসা ছিল সেখানে। ব্যবসার কথা চিন্তা করেই দেশভাগের সময় সপরিবার বাংলাদেশের দিনাজপুর শহরে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। খালেদা জিয়ার আদি বাড়ি অবশ্য ছিল বাংলাদেশের ফেনী জেলার ফুলগাজীতে। আর নানার বাড়ি ছিল তৎকালীন উত্তর দিনাজপুরে চাঁদবাড়ি এলাকায়।

জলপাইগুড়ি পুরসভা ভবনের কাছেই নয়াবস্তিতে শৈশবের বেশ কয়েকটা বছর কেটেছিল তাঁর। প্রবীণদের দাবি, জলপাইগুড়িতেই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা। দেশভাগের পর খালেদার পরিবার মুখার্জী পরিবারের সঙ্গে সম্পত্তি বিনিময় করে বাংলাদেশে চলে যায়।

দিনাজপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি সদর গার্লস স্কুল ও পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা। ছোটবেলায় আদরের নাম ‘পুতুল’। চা ব্যবসার সূত্রে খালেদা জিয়ার পরিবার জলপাইগুড়ির নয়াবস্তি এলাকায় বসবাস করতেন। বাবা ‘দাশ অ্যান্ড কোম্পানি’তে চাকরি করতেন।

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া জলপাইগুড়ির নয়াবস্তিতে। খালেদার বাড়িতে এখন থাকে গোপ পরিবার। পাশেই চক্রবর্তী পরিবার। সবটা মিলিয়েই ছিল খালেদাদের বাড়ি। ঠিক উল্টোদিকে বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ভোলা মণ্ডলের। তাঁর দাবি, মায়ের কোলে পিঠে বড় হয়েছেন খালেদা। অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন তিনি। গত বছর পর্যন্ত খালেদার আত্মীয়রা এসে ভিটে দেখে গিয়েছেন।

ইতিহাসবিদ আনন্দ গোপালঘোষের দাবি, ১৯৫০ সালের পর খালেদার পরিবার জলপাইগুড়ি ছেড়ে চলে যায়। তাঁর দাবি, খালেদার বাবা ইসকিন্দার মিঁয়া চায়ের ব্যবসার সূত্রে নোয়াখালি থেকে জলপাইগুড়ি আসেন। বিখ্যাত ফুটবলার ফজলার রহমানের ছেলে পুটু রহমানের দাবি, আমার বাবার সঙ্গে খালেদার পরিবারের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। খালেদার বাবা চাকরি সূত্রে জলপাইগুড়ি এসেছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে চায়ের ব্যবসায় যুক্ত হন। খালেদা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে তিনি ওপার বাংলায় গিয়েছিলেন।

১৯৬০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদার বিয়ে হয়। জন্মের সময় তার নাম রাখা হয়েছিল খালেদা খানম পুতুল। বিয়ের পরে অবশ্য স্বামীর নামের প্রথম দুই অক্ষরকেই পদবী হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করেন তিনি। নতুন নাম হয় খালেদা জিয়া। 

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় স্বামী সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের পাশে থাকতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানেও গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে ফিরে থাকতে শুরু করেন চট্টগ্রামে।

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ছয় বছর পরে, ১৯৭৭ সালে দেশের প্রেসিডেন্ট হন খালেদার স্বামী জিয়াউর রহমান। তার পরের বছর দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে তৈরি করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। 

জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পদাধিকার বলে ‘ফার্স্ট লেডি’ হন তার পত্নী খালেদা। সেই প্রথম আপাত অন্তর্মুখী স্বভাবের পুতুল জনসমক্ষে আসেন। তখনও অবশ্য রাজনীতিতে আগ্রহ ছিল না তার। 

তবে ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাদের গুলিতে খুন হওয়ার পর মত বদলান খালেদা জিয়া। সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮২ সালে স্বামীর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির সাধারণ সদস্যপদ গ্রহণ করেন। দলের সহ-সভাপতি হন ১৯৮৩ সালে।

গৃহবধূ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসে ৪১ বছর পার করেছেন খালেদা জিয়া। জলপাইগুড়ির সেই সহজ-সরল মেয়েটি হয়ে উঠেন বিশ্বের এক আপহীন নেত্রী। 

আরও পড়ুন: Begum Khaleda Zia: ‘৩১ বছর আগে আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়েছিলেন খালেদা জিয়া! ওঁর মৃত্যুতে এবার আমার নির্বাসন কি ঘুচবে?’ :তসলিমা

আরও পড়ুন: Bangladesh Unrest: শীতকাতর রাতে ঘরে আটকে রেখেই একের পর এক বাড়িতে লাগানো হচ্ছে আগুন! ইউনূসের ‘উগ্রপন্থী’ বাংলাদেশে বিপন্ন হিন্দুরা…

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version