পশ্চিমবঙ্গেরও বহু লোকসভা কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের সেই প্রচারে প্রভাবিত হয়ে বিজেপিকে সমর্থন করেছেন মানুষ। কিন্তু প্রতিদানে কী মিলেছে, বুধবার বাঁকুড়ার ওন্দায় দলীয় সভা থেকে সে প্রশ্ন তুললেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘আগামী ভোট বাংলার অধিকারকে সামনে রেখে হবে। ১০০ দিনের কাজে বাংলার প্রাপ্য টাকার দাবিকে সামনে রেখে হবে।
আবাস যোজনায় বাংলার প্রাপ্য টাকার দাবি, গ্রাম সড়ক যোজনায় বাংলার প্রতি বঞ্চনাকে নিয়ে হবে।’ এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে রাজ্যের প্রাপ্য না-মেলার ইস্যুকেই যে তৃণমূল মূল নির্বাচনী ন্যারেটিভ করতে চাইছে, ওন্দার সভায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। জনতার উদ্দেশে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘পঞ্চায়েত বা লোকসভা নির্বাচনে কী বিষয়ে ভোট দেবেন, সেটা আপনাদের ঠিক করতে হবে। ধর্মের ভিত্তিতে, না নিজেদের অধিকার নিয়ে ভোট দেবেন? নির্বাচনের ইস্যু আপনাদের ঠিক করতে হবে।’
কেন্দ্রীয় বঞ্চনাকে নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার করতে ১০০ দিনের কাজের বকেয়ার দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানকে সামনে রাখতে চাইছে তৃণমূল। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে রাজ্যের প্রতিটি বুথে এই ইস্যুতে জনতার স্বাক্ষরিত চিঠি সংগ্রহ করবেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। একমাস এই অভিযান চালিয়ে চিঠি নিয়ে দিল্লিতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সামনে ধর্নায় বসবেন অভিষেক।
অভিষেক এ দিন দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রতিটি বুথে আমাদের কর্মীরা যাবেন। যদি ৫০টি পরিবার থাকে, তাদের সবাইকে বোঝানো হবে যে এই লড়াইয়ে তৃণমূল পাশে রয়েছে। ১০০ দিনের কাজের টাকার দাবিতে দিল্লিতে আন্দোলনে প্রস্তুত তৃণমূল। একই সঙ্গে, বিজেপি নেতাদের দেখলেই তাঁদের ঘিরে বলুন, ১০০ দিনের কাজের টাকা দাও। আমাকেও যদি কোনও বুথে, কোনও গ্রামে যেতে বলেন, আমি যাব।’
২০১৯ থেকে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ফল প্রত্যাশিত নয়। তারপরেও সেখানকার জনতার দিক থেকে তৃণমূল মুখ ফিরিয়ে নেয়নি বলে এ দিন বোঝাতে চান অভিষেক। পাশাপাশি ভোটারদের উদ্দেশে সতর্কবাণীও শুনিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘আপনার অধিকার রক্ষার স্বার্থে যদি আপনি ভোট না দেন, (তা হলে) আপনার অধিকার নিয়ে তৃণমূলও লড়াই করবে না। আপনি যদি নিজের অধিকারের জন্য লড়াই না করেন, তৃণমূল আপনাদের অধিকারের জন্য লড়াই করবে না।’
১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য এ দিনও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলেছেন অভিষেক। গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘১০০ দিনের কাজের টাকার জন্য সুভাষ সরকার, সৌমিত্র খাঁ দিল্লিতে দরবার করেছে, এমনটা কেউ দেখেছেন? এমন আজব বিরোধী দলনেতা, আজব সাংসদ, আজব বিধায়ক, কেউ দেখেছেন?’
এই ইস্যুতেই আবার তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। কালিয়াগঞ্জের সভায় বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘তৃণমূল বলছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা দিতে হবে। হিসেব দাও, টাকা নাও। কে আটকেছে টাকা?’ প্রশ্ন তুলে তাঁর বক্তব্য, ‘প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে জেসিবি দিয়ে মাটি কেটে এরা ভুয়ো বিল করেনি?
জব কার্ড হোল্ডাররা গোরু কেনার জন্য, ফলের বাগানের জন্য ১৫ হাজার টাকা কি পেয়েছেন? এই টাকা কোথায় গেল?’ বঙ্গ বিজেপি ১০০ দিনের কাজ-সহ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুললেও অভিষেক গেরুয়া শিবিরের দিকেই ‘দুর্নীতি’র আঙুল তুলেছেন। তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘আবাস প্রকল্পে ১১ লক্ষ ৩০ হাজার নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। একটা দুর্নীতি দেখাতে পারলে বাঁকুড়ায় আসব না।
কিন্তু বিজেপির বিধায়ক দিবাকর ঘরামির বউয়ের নাম আবাস যোজনায় কে ঢুকিয়েছে? নিলাদ্রিশেখর দানার মেয়ে অবৈধ ভাবে এইমসে কী ভাবে চাকরি পেলেন?’ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে বিজেপি পদক্ষেপ না করলেও তৃণমূলের বড়-ছোট যে নেতার বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অভিষেকের দাবি।
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মানুষ যাঁকে প্রার্থী চায়, তৃণমূল তাঁকেই প্রার্থী করবে বলে ফের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘আপনারা ঠিক করবেন, তৃণমূল কাকে প্রার্থী করবে। কোনও নেতা নন। আপনারা যেমন লোককে পঞ্চায়েতে দেখতে চাইবেন, তাঁকেই প্রার্থী করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই দেখবেন, কী ভাবে প্রার্থী ঠিক করা হবে।’