অনির্বাণ ঘোষ
দেশের প্রায় ২৩ কোটি ও বাংলার প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ করোনা টিকার তিনটি ডোজ়ই নিয়েছেন। এই গণটিকাকরণ পর্ব মেটার পরেও বছর ঘুরতে চলল। কিন্তু এতে লাভ কি আদৌ কিছু হয়েছে? নাকি ফের একদফা বুস্টার ডোজ় লাগবে?

CoVovax CoWin: এবার কো-উইন অ্যাপে কোভোভ্যাক্স, সুখবর আদর পুনাওয়ালার
সে সবের উত্তর পেতেই একটি গবেষণায় হাত দিয়েছে কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। সেই গবেষণায় সামিল কলকাতাও। আমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ের মোট চারটি হাসপাতালের পাশাপাশি সেই গবেষণায় অংশ নিচ্ছে কলকাতার দু’টি হাসপাতাল- পিজি ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, করোনা টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয়, দু’টি ডোজ় নেওয়ার পরেই গড়ে ৬-৯ মাস খুব সক্রিয় থাকছে অ্যান্টিবডি। যা বহু ক্ষেত্রে সহজেই নভেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় সক্ষম। তার পর ধীরে ধীরে অ্যান্টিবডি ফিকে হচ্ছে। কিন্তু শরীরে থেকে যাচ্ছে লিম্ফোসাইট গোত্রের কিছু স্মৃতিকোষ বা মেমরি সেল। পরে করোনার সংক্রমণ হলে এই স্মৃতিকোষগুলোই ঝটপট কোভিডের অ্যান্টিবডি শরীরে বানিয়ে নিতে সক্ষম।

Covid Update India : ২০৩ দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ, দেশে ৬ হাজার ছাড়াল দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা
কিন্তু সেই ক্ষমতাটাই বা কত দিন সক্রিয় থাকছে? তার পর কি ফের টিকাকরণ দরকার? প্রকল্পের মুখ্য গবেষক, আইসিএমআর-এর মলিকিউলার বায়োলজি বিশেষজ্ঞ শান্তসবুজ দাস জানাচ্ছেন, এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজাটাই তাঁদের গবেষণার মূল লক্ষ্য।

বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ের একটি করে এবং আমেদাবাদ ও কলকাতার দু’টি করে হাসপাতালকে নিয়ে এই এপ্রিলেই শুরু হয়েছে গবেষণার কাজ। তাতে অংশ নিয়েছেন ওই হাসপাতালগুলির প্রতিটি থেকে ১০০ জন চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁদের বেছে নেওয়ার কারণ, এঁদের সকলেরই তিনটি ডোজ় টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে।

Covid Update India : আতঙ্ক বৃদ্ধি করে বাড়ল কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা! দুয়ারে চতুর্থ ঢেউ?
প্রকল্পের দুই উপ-মুখ্য গবেষক- পিজি-র ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ মিতালি চক্রবর্তী ও মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁরা জানাচ্ছেন, তিনটি ডোজ়ই যথেষ্ট নাকি করোনা মোকাবিলায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি করে বুস্টার ডোজ় দরকার, সেটা জানাই এই গবেণষার উদ্দেশ্য।

Covid Update In West Bengal : সংক্রামিত কম, বাংলায় চিন্তা সংক্রমণের হারই, ৬ মাসে দেশে সর্বাধিক আক্রান্ত বুধবার
তবে এই গবেণষার ফল জানতে বছর তিনেক সময় লাগবে। কারণ, আগামী দু’-আড়াই বছর ধরে দফায় দফায় রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হবে স্বেচ্ছাসেবকদের থেকে। প্রতি চার মাস অন্তর মোট পাঁচ বার রক্ত নিয়ে দেখা হবে, সেই নমুনায় অ্যান্টিবডি ও স্মৃতিকোষের ঘনত্ব ও সক্রিয়তা কতটা অটুট আছে কিংবা নেই। স্বেচ্ছাসেবকদের বয়স হতে হবে ৫৮ বছরের কম। তাঁদের কারও ইমিউনিটি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা কিংবা ক্যান্সার বা টিবি-র মতো অসুখের ইতিহাস থাকলে চলবে না। তাঁদের জন্য আরও একটি শর্ত হলো, আগামী আড়াই বছরের মধ্যে শহরের বাইরে গেলে গবেষকদের জানিয়ে যেতে হবে।

Covid 19 India Today: ফের অ্যাক্টিভ রোগী ৩৫ হাজার পার, কোভিড ঠেকাতে মক ড্রিল
ওই গবেষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আইসিএমআরের উপদেষ্টা গবেষক তথা করোনা মোকাবিলার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী সমীরণ পণ্ডা বলেন, ‘আগামী দিনে ফের করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োজন কি না এবং বুস্টার দরকার পড়লেও ক’টি ডোজ় জরুরি, সে সব জানতে এই গবেষণাটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ।’

Covid Update West Bengal : সংখ্যায় কম, তবে বঙ্গেও করোনা বাড়ছে লাফিয়ে!
ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানাচ্ছেন, কোভিড যেমন নতুন অসুখ, তেমনই হাতিয়ার হিসেবে এর টিকা তুলনায় আরও নতুন। কিন্তু সেই অস্ত্রে ধার কত দিন থাকছে, সেটাও জানা খুব জরুরি। তাই, এই গবেষণালব্ধ ফল প্রকাশ পেলে তা জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণেও সাহায্য করবে বলে ওই চিকিৎসক মনে করছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version