মণিপুষ্পক সেনগুপ্ত
দিল্লির কাছে রাজ্য সরকার যা চায়, বঙ্গ-বিজেপিও চায় তা-ই! দু’পক্ষেরই দাবিদাওয়া আর্থিক অনুদান সংক্রান্ত। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে প্রাপ্য মেটানোর দাবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার কড়া নেড়েছেন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের দরজায়। অন্যদিকে, দল পরিচালনার কাজে অর্থিক সহায়তা বাড়ানোর দাবিতে সুকান্ত মজুমদাররা চাপ বাড়াচ্ছেন দিল্লির বিজেপির নেতাদের উপর।

Bharatiya Janata Party : ২৪-এ টিকিট পাব? সংশয়ে পদ্ম এমপি-রা
তবে কেন্দ্র মমতার দাবি নিয়ে গড়িমসি করলেও বঙ্গ-বিজেপির উপর কৃপাদৃষ্টি পড়েছে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের। সূত্রের খবর, বঙ্গ-বিজেপির কোষাগারে দিল্লি থেকে দ্রুত আসতে চলেছে বাড়তি অর্থ। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মেটানোর দাবিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সাংসদরা সম্প্রতি দেখা করতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে। মন্ত্রীর দেখা না পেয়ে তাঁকে চিঠি লিখে প্রাপ্য মেটানোর দাবি জানান সাংসদরা।

Mukul Roy : মুকুলে বিভ্রান্তি, বিক্ষোভ পদ্মে
কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াতে রাজ্য জুড়ে সই সংগ্রহ অভিযানে নামারও ডাক দিয়েছে তৃণমূল। মমতা আগেই জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র বকেয়া টাকা না মেটালে তিনি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ধর্নায় বসবেন। দিল্লি যাতে দ্রুত বকেয়া মিটিয়ে দেয়, সে জন্য মোদী সরকারের উপর নরমে-গরমে চাপ বাড়িয়েই চলেছে তৃণমূল। কিন্তু কেন্দ্রের একটাই কথা, হিসেব না বোঝালে বাংলায় টাকা পাঠানো সম্ভব নয়। ফলে গত ক’মাসে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরমে পৌঁছেছে।

বঙ্গ-বিজেপিকে অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুদান আদায়ের জন্য দিল্লিতে ধর্নায় বসার পরিকল্পনা করতে হয়নি। পার্টির সদর দপ্তরে চিঠিও লিখতে হয়নি। তাঁরা দিল্লি গিয়ে ঠারেঠোরে শীর্ষ নেতৃত্বকে বুঝিয়েছেন, পার্টির কোষাগারে টান পড়লে নিচুতলায় সংগঠন আরও ধাক্কা খাবে। যার প্রভাব পড়বে লোকসভা ভোটে। সূত্রের খবর, এতে কাজ হয়েছে।

Mukul Roy Missing : মুকুল অন্তর্ধানের রহস্য জানতে তৎপর পুলিশ! BJP নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ
দিল্লি থেকে বাড়তি আর্থিক সহায়তা পাঠানোর বার্তা পৌঁছেছে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারদের কাছে। সুকান্তর কথায়, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব টাকা দিচ্ছেন না, এ কথা ঠিক নয়। আগামী মাস থেকে আমাদের মাসিক ব্যয়বরাদ্দ আরও বাড়াচ্ছে দিল্লি।’ যা শুনে বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতার পাল্টা বক্তব্য, ‘দিল্লি নিশ্চয়ই আগ বাড়িয়ে মাসিক অনুদান বাড়াতে যায়নি।

Sukanta Majumdar : দণ্ডির পাল্টা গোমূত্র! বিতর্কে সুকান্ত
বোঝাই যাচ্ছে, টাকা চেয়ে বারবার দিল্লিতে আর্জি জানাচ্ছিল বঙ্গ-বিজেপি।’ সুকান্তর দাবি, ‘আমাদের দল তৃণমূলের মতো তোলাবাজির টাকায় চলে না। বিরিয়ানির টোপ দিয়ে সভায় ভিড় বাড়াতে হয় না। পার্টি সদস্যদের চাঁদায় চলে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও আমাদের নিয়মিত আর্থিক সহায়তা পাঠান। আগামী মাস থেকে সেটা আরও বাড়বে।’

তবে এতে তেমন হেলদোল নেই বঙ্গ-বিজেপির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার। বিজেপিতে থেকেও তিনি ‘সমান্তরাল পার্টি’ চালান বলে গেরুয়া শিবিরের একাংশের অভিযোগ। দলের অন্দরে গুঞ্জন, ওই নেতা নিজের কর্মসূচির খরচ নিজেই জোগাড় করেন। দিল্লির পরোয়া করেন না। রাজনৈতিক মহলের মতে, তাঁর সঙ্গে টক্কর দিতেই বঙ্গ-বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির অনুদান বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল দিল্লিতে।

Sukanta Majumdar Mukul Roy : ‘মানসিক ভারসাম্যহীন লোক কী ভাবে বিধায়ক থাকেন…’, মুকুল নিয়ে মন্তব্য সুকান্তর
যদিও সুকান্তরও দাবি, তিনিও দলের বহু কর্মসূচিতে পার্টির কোষাগার থেকে টাকা নেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি এমন দলীয় কর্মসূচিতে যাই, যেখানে দলের কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের টাকায় সভা আয়োজন করে। এটাই বিজেপি।’

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বাংলায় বিপুল অর্থব্যয় করেছিলেন শাহরা। কিন্তু সে তুলনায় সাফল্য মেলেনি। তারপর উৎসাহে ভাটা পড়েছিল দিল্লির। প্রশ্ন উঠেছে, আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কি বঙ্গ-বিজেপির আর্জিতে সাড়া দিলেন দিল্লির নেতারা? জবাবে এক বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘শুধু টাকা পাঠালেই চলবে না। রাজ্য বিজেপিতে প্রকৃত অভাব কর্মীর। সেটাও কি দিল্লি থেকে আসবে? তবেই ২০২৪-এ সাফল্য মিলবে।’

Mukul Roy: আচমকা দিল্লিতে মুকুল রায়, রাজধানী যাত্রার কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের মন্তব্য, ‘বাংলা থেকে কর আদায় করছে দিল্লি। সেই টাকায় বাংলায় এসে বিজেপি নেতারা ফূর্তি করছেন। এই ভাবে সরকার আর দল চালাচ্ছে বিজেপি। আমাদের একটাই দাবি, বাংলার প্রাপ্য মিটিয়ে দিক দিল্লি।’ জবাবে বঙ্গ-বিজেপির এক নেতার পরামর্শ, ‘আমরা দলের ভিতর লড়াই করে প্রাপ্য টাকা দিল্লি থেকে আদায় করেছি। তৃণমূলকে সেটুকু কষ্টও করতে হবে না। শুধু ব্যয়ের হিসেব বুঝিয়ে দিলেই চলবে। কেন্দ্র পরদিনই টাকা পাঠিয়ে দেবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version