তথাগত চক্রবর্তী: বুধবার দিল্লিতে অনুব্রতকন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে ইডি। গোরু পাচার মামলায় গতকাল তাঁকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। এনিয়ে এবার হলেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। বুধবার বারুইপুরে অগ্নিমিত্রা বলেন, সুকন্যা মণ্ডল গ্রেফতার হয়েছে। আসল মাথাটা কে তা আমরা জানতে চাই।
গোরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন, তাঁর হিসেবরক্ষক মণীশ কোঠারি। তাদের জেরা করে গ্রেফতার করা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। তবে তার জন্য বহুকাঠখড় পোড়াতে হয় ইডিকে। এরমধ্যেই সুকন্যা মাণ্ডলকে জেরা করেছিল ইডি। তারপর গতকাল সুকন্যা মণ্ডলকে গ্রেফতার করল ইডি। অভিযোগ, গোরু পাচারকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তদন্তে তিনি অসহযোগিতা করছেন সুকন্যা।
বুধবার রাতে বারুইপুর সংশোধনাগারে আসেন আগ্নিমিত্রা পাল। সেখানেই তিনি বলেন, সবকটাই জেলে যাবে। একসময় অনুব্রত মণ্ডল বলতো পুলিসকে বোমা মারুন। সবকিছুরই শেষ রয়েছে। জেলে যেতেই হবে। সুকন্যা মণ্ডল জেলে গিয়েছে। বাকীরাও যাবে। আসল মাথাটা কে তা আমরা জানতে চাই। আর ধৈর্য থাকছে না।
এখানেই থেমে থাকেননি অগ্নিমিত্রা। বিজেপি নেত্রী বলেন, আসল মাথার কাছে ৭৫ শতাংশ টাকা যেত। এখন তো শুনছি সেই ৭৫ শতাংশ টাকা যার কাছে যেত সে নাকি এখন জেলায় জেলায় ঘুরছে ১০০ শতাংশ নেওয়ার জন্য। আমরা চাই সেই আসল মাথাটাকে গ্রেফতার করা হোক।
গোরু পাচারকাণ্ডে বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে। সেই টাকার একটি বড় অংশ অনুব্রত মণ্ডল তাঁর সহযোগী, নিরাপত্তাকর্মী ও মেয়ের নামে সম্পত্তি করেছেন বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে ইডির হাতে এসেছে সুকন্যা মণ্ডলের বিপুল সম্পত্তির তালিকা। কোথাও রাইস মিল, কোথাও জমি, কোথাও নগদ ফিক্সড ডিপোজিট। সুকন্যার সম্পত্তির বহর দেখে তাজ্জব ইডি।
ইডি সূত্রে খবর, একাধিকবার সুকন্যা মণ্ডলের বয়ানে অসংগতি পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। তাঁর সম্পত্তির হিসেবই তিনি ঠিকঠাক দিতে পারছিলেন না। একসময় মনে করা হচ্ছিল সুকন্যা মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিলেন অনুব্রত। কিন্তু বারবার জিজ্ঞসাবাদে উঠে আসে যে তাঁর সম্পত্তি সম্পর্কে সবটাই জানতেন সুকন্যা।
সুকন্যা মণ্ডলের আয়কর রিটার্নে মিলেছিল চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা কেষ্ট-কন্যার সম্পত্তি বেড়েছে রকেট গতিতে। সিবিআই সূত্রে খবর, ৮ বছরে সুকন্যার আয় বেড়েছে প্রায় ১৭৫ গুণ! ২০১৩-১৪ থেকে ২০২১-২২-এর মধ্যে আয় বেড়েছে প্রায় ১৭৫ গুণ। ২০১৯-২০-তে আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সুকন্যার আয়কর রিটার্ন থেকেই এই তথ্য পেয়েছে সিবিআই। সামান্য প্রাথমিক শিক্ষিকার এই বিপুল আয়বৃদ্ধি কোন জাদুতে? চার্জশিটে প্রশ্ন সিবিআই তদন্তকারীদের। শুধু সুকন্যা নয়, বিপুল হারে সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে অনুব্রত মণ্ডলেরও। ৮ বছরে অনুব্রতর আয় বেড়েছে প্রায় ১৯ গুণ।
সুকন্য মণ্ডলের গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মণ্ডল বলেন, আগেই বলেছিলাম শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। সুকন্যা গ্রেফতার হবেন। ইডি ও সিবিআই বারবার তাঁকে ডেকেছে। তার পরেও তার কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পা.নি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। সমন বাইপাস করার জন্য বারবার তিনি আদালতে চলে যাচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত ইডি বাধ্য হয়েছে গ্রেফতার করতে।