এই সময়:কালিয়াগঞ্জ নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে এই মুহূর্তে তোলপাড় চলছে। তারই মধ্যে উত্তর দিনাজপুরেরই দাড়িভিটে প্রায় পাঁচ বছর আগে, ২০১৮-র ২০ সেপ্টেম্বর, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গোলমালে দুই তরুণের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের হালে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। দুই তরুণের মৃত্যু ঠিক কাদের গুলিতে এবং কী ধরনের অস্ত্রে–এত দিনেও সিআইডি সে ব্যাপারে আলোকপাত না-করতে পারায় বিচারপতির মন্তব্য, ‘অনেক হয়েছে। আর না। এতদিন ধরে দু’জনের দেহ কবরে রয়েছে। আর না।’

Malda News : কালিয়াগঞ্জের রেশ কাটতে না কাটতেই মালদার কালিয়াচকে উদ্ধার নাবালিকার দেহ, জোর রহস্য
বুধবার সকাল থেকে টানা আড়াই ঘণ্টা শুনানির পরে এ দিনই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ওই ঘটনায় তাদের তদন্ত রিপোর্ট রাজ্যকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টোয় ফের শুনানি নির্দিষ্ট করেছেন বিচারপতি। বিচারপতির প্রশ্ন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট, কোনও শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। অথচ এতদিনেও কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র–তা চিহ্নিত করতে পারল না সিআইডি! আদালত হতম্ভব দাড়িভিট স্কুলের সামনে মোতায়েন পুলিশের ভূমিকাতেও।

Atiq Ahmed: মাফিয়া আতিক হত্যাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে যোগী সরকার, ক্যাভিয়েট দাখিল
বিচারপতির বক্তব্য, পাঁচশোর বেশি উন্মত্ত জনতার ভিড় থেকে বোমা ছোড়া হয়েছে, ভোজালি, বাঁশ, লাঠি, বোতল, রড নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করা হয়েছে–অথচ পুলিশ আকাশের দিকে গুলি ছুড়েও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করল না! কেন শুধুমাত্র লাঠিচার্জ বা কাঁদানে গ্যাসে ভরসা রাখল? আদালতের প্রশ্ন, স্থানীয় বিধায়ক এবং পুলিশ সুপার সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠার পরেও কেন সেই ব্যাপারে তদন্তে এগোল না সিআইডি!

Kaliaganj Rape Case : ‘শিশুর মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি!’ কালিয়াগঞ্জ ধর্ষণকাণ্ডে জাতীয় ও রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিটির টুইট তরজা
এত বড় একটা সশস্ত্র জমায়েত হল, তার মানে আগে থেকে ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র বা রহস্য উদ্‌ঘাটনে সিআইডি কী পদক্ষেপ করেছে? সিআইডি তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরে কেন জেলা পুলিশের প্রথম তদন্তকারী অফিসরারের সাক্ষ্যগ্রহণও করেনি–সে প্রশ্নও তুলেছে আদালত। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী সুবীর সান্যাল কমিশনের তদন্ত-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, নিহতের বাবার চিঠি পেয়ে কমিশনের দল এক ডিআইজির নেতৃত্বে ১১ অক্টোবর ইসলামপুরে যায়।

Kaliyaganj Case : কালিয়াগঞ্জ কাণ্ডে কড়া NCPCR! ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের রিপোর্ট তলব
বার বার রাজ্যকে অনুরোধের পরেও কোনও নথি মেলেনি। প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে দলটি নিজেরাই তদন্ত শুরু করে। কমিশনের তদন্ত অনুযায়ী, উপর দিক থেকে চালানো গুলিতে তাপস বর্মনের মৃত্যু হয়েছিল। রাজেশ সরকারকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। সে কারণে গুলি শরীরের ভিতরে গিয়ে ঘুরে দেহাংশ ছিন্নভিন্ন করেছে।

Calcutta High Court : ভুয়ো মাদক মামলায় ফাঁসানোয় দু’লাখ জরিমানা পুলিশকে
রাইফেল থেকে ছুড়লে এমন হতে পারে বলেও মনে করেছেন কমিশনের তদন্তাকারীরা। আবার পুলিশকর্মী পরিমল অধিকারী গুলিতে জখম বলে পুলিশ দাবি করলেও তদন্তকারীরা জেনেছেন, তিনি গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন। গুলি লাগেনি। কমিশনের বক্তব্য, দু’হাজার পড়ুয়ার ওই স্কুলে বহু শিক্ষক পদ ফাঁকা ছিল। শুধু উর্দু শিক্ষক নিয়োগ কেন, এই নিয়েই প্রতিবাদ। গোলমাল বাড়ে পুলিশের দুর্বলতায়। দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বাধে। স্কুলের শিক্ষকরাও দুটো দিকে ভাগ হয়ে যান।

রাজ্যের তরফে শুভব্রত দত্ত অভিযোগ করেন, কমিশন এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে তদন্ত করেছে। রাজ্যকে রিপোর্টের কপিও দেওয়া হয়নি। ২০১৮-র ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম অভিযোগ করা হয়। প্রথমে এসপি বা বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল না। আবার ২৩ সেপ্টেম্বর ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে এসপি সুমিত কুমার, বিধায়কের নাম দেওয়া হয়।

Purulia News: পুরুলিয়া পুলিশ লাইনে ভয়াবহ ঘটনা, অস্বাভাবিক মৃত্যু এনভিএফ কর্মীর
সেই চিঠি থানায় নয়, পাঠানো হয় মুখ্যসচিবকে ই-মেলে। ঘটনার দিন বিধায়ক কলকাতায় ছিলেন। এসপিও ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাঁদের নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা বলে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন নেওয়ার পরই এই সিদ্ধান্তে এসেছে সিআইডি। নিহতদের পরিবারের আইনজীবী পার্থ ঘোষের অভিযোগ, দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য সিআইডি এগোয়নি। নিরীহ গ্রামবাসীদের নামে মিথ্যে চার্জশিট দিয়েছে। সিআইডি এসপিকে অভিযোগ-মুক্ত করেছে কোনও যুক্তি ছাড়াই। নিহতের বাবার অভিযোগ না নিয়ে পুলিশও স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করে এগিয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version