অর্নবাংশু নিয়োগী ও পিয়ালি মিত্র: জেলে প্রায় তিনশো দিন হয়ে গেল। নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে জেলে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এবার নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। জেলের চিকিত্সা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন তিনি। মঙ্গলবার আদালতে তাঁর কাতর আর্তি, মরে গেলে আর বিচার কী করবেন। তিনশো দিন হয়ে গেল।

আরও পড়ুন-বড়জোড়ার স্টিল কারখানায় ভয়ংকর দুর্ঘটনা, ফুটন্ত লোহা ছিটকে দগ্ধ ৩০ শ্রমিক

আদালতের বাইরে দলীয় বিষয় নিয়ে কথা বললেও এজালাশে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে ভেঙে পড়লেন পার্থ। এদিন বিচারকের উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে বলেন, আমি একটা কথা বলতে চাইছেন। জেল সুপার একটি হসপিটালকে লিখে দিচ্ছে। কিন্তু হসপিটাল ১০ দিন পর রিপোর্ট ব্যাক করছে। অর্থ্যাৎ একজন আক্রান্ত হবে তার দশদিন পর এসে চিকিৎসকরা দেখবেন। দেখুন একটু। পার্থর কথা শুনে বিচারক বলেন, আমি দেখছি ব্যাপারটা। আপনি তো এই প্রথম আবেদন জানালেন। এদিন আদালত থেকে বেরোনোর সময় বিচারককে পার্থ আবার বলেন, স্যার আর বিচার চাই না। আপনি আমার চিকিৎসার ব্যাবস্থা করুন। বিচার কী হচ্ছে বুঝে গেছি । ৩০০ দিন হয়ে গেল । আমি ৫ বার বিধায়ক হয়েছি। তারা কি আমাকে চোর মনে করবে? সুস্থ জীবন পেলাম না । স্যার বিচারটা তাড়াতাড়ি করুন। মরার আগে যেন দেখে যেতে পারি ।

বিচারকের কথা শুনে ধরা গলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, মরে গেলে আর বিচার করবেন কী। তিনশো দিন হয়ে গেল স্যার।  এদিন পার্থর আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদন করেন। তিনি বলেন, বিনা বিচারে আটকে রাখার হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি অসুস্থ। তাঁর পা ফুলছে। তার উপযুক্ত চিকিত্সা করা হোক। অসুস্থ মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত হচ্ছে। বিনা বিচারে রয়েছেন। এখনও কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই পার্থর বিরুদ্ধে। কোর্ট চত্বরে তাঁর বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্য করছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী।

এদিন আদালতে ঢোকার মুখে তাঁকে বাইরন বিশ্বাসের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এনিয়ে পার্থ বলেন, বাইরন বিশ্বাস তৃণমূলে এসেছেন। একে একে সবাই তৃণমূলে যোগ দেবেন। এদিকে, বাইরন নিয়ে কথা বললেও অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায় নিয়ে কিছু বলতে চাননি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। গতকাল শুনানিতে অর্পিতাকে নিয়োগ দুর্নীতিতে সমান দোষী বলে উল্লেখ করে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বক্তব্য ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রাজ। এখন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ঠিক করতে হবে তিনি ডি-ফ্যাক্টো রানী ছিলেন নাকি পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় তাঁর আঙ্কেল ছিলেন। পার্থর ৩১ এলআইসি পলিসির নমিনি ছিলেন অর্পিতা। অন্যদিকে, সোমবার এই মামলার সওয়াল জবাবে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী নিয়োগ দুর্নীতির সব দায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরে চাপিয়ে দেন। তাঁর দাবি, এক্ষেত্রে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কোনও ভূমিকা নেই।

উল্লেখ্য, গত বছর পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশকিছু সম্পত্তির দলিল উদ্ধার হয় সেখানে পাওয়া যায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম। তরপর তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় বিপুল টাকা। দুদফায় অর্পিতার দুটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৪৯ কোটি টাকা। পার্থর বিরুদ্ধে ইডির পাশাপাশি সিবিআইয়ের মামলাও রয়েছে। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরপরই একে একে গ্রেফতার হন তৃণমূলনেতা শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষ, অয়ন শীলরা। 

আদালত চত্বরে পার্থর বিরুদ্ধে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠছে। চোর চোর স্লোগান উঠছে। এত যথেষ্ঠই বিব্রত পার্থ। এমনকি জেলেও তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। তাঁকে লক্ষ্য় করে টয়লেটের ময়লা ছোড়ে আইএস জঙ্গি সন্দেহ আটক মুশা। সেই ময়লা এড়াতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পান পার্থ।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version