জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গত ২৯ মে পঞ্চমবার আইপিএল (IPL 2023) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সমর্থকদের বিশেষ উপহার দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)। জানিয়েছিলেন, সমর্থকদের জন্যই আরও একটি আইপিএল (IPL 2024) খেলতে চান তিনি। কিন্তু ফের একবার তাঁর অবসরের জল্পনা উসকে দিল চেন্নাই সুপার কিংস (Chennai Super Kings)। ২০২৪ সালের আইপিএল-এ ‘ক্যাপ্টেন কুল’ খেলবেন কিনা সেটা নিয়ে কিন্তু রহস্য রয়েই গেল। কারণ সিএসকে-এর সিইও কাশী বিশ্বনাথন জানিয়ে দিলেন, যত দিন খুশি খেলতে পারেন তিনি। দলের তরফে কিছু বলা হবে না।
কাশী বিশ্বনাথন বলেন, “ফাইনাল জেতার পরেই ধোনি জানিয়েছিল অস্ত্রোপচার করাতে মুম্বই উড়ে যাবে। তার পরে রাঁচী ফিরবে। রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের বিয়ের পর আমি ওর সঙ্গে দেখা করি। আমাকে বললো তিন সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়ে রিহ্যাব শুরু করবে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেলবে না।”
এদিকে ধোনির ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, “অস্ত্রোপচারের পর ধোনি অনেক ভালো আছে। আগামী আইপিএল শুরু হতে এখনও অনেকটা সময় আছে। তাই আমাদের ধারণা আগামী মরসুমেও ধোনির হাতেই চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যাটন থাকবে। মাঠে নামার ব্যাপারে ধোনি নিজেও খুব আশাবাদী। বাকিটা সময় বলবে।”
তবে কাশী ফের বলেন, “আসলে ধোনি ভালো জানে কখন, কীভাবে এগোতে হবে। ও নিজে থেকেই সব জানাবে। সবার আগে ফোন করবে এন শ্রীনিবাসনকে। স্পষ্টভাবে নিজের শারীরিক অবস্থার কথা বলবে। শ্রীনিবাসনের থেকে আমরা সব জানতে পেরে যাব। ২০০৮ থেকে একই জিনিস চলছে।”
এবারের আইপিএল ফাইনালের পরেই মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে গিয়েছিলেন হাঁটুর চিকিৎসার জন্য। গত ১ জুন তাঁর বাঁ-হাঁটুতে ছোট্ট অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর সামান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেই দিনই ধোনিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এরপর আপাতত ঝাড়খণ্ডের নিজের ফার্ম হাউজে বিশ্রাম করছেন ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক।
কাশী ফের যোগ করেন, “আমরা কখনও ওকে জিজ্ঞাসা করিনি ও খেলবে কি না। খেলতে না পারলে ও স্পষ্ট বলে দিত আমাদের। তবে বুঝতে পেরেছিলাম ওর খেলতে কতটা কষ্ট হচ্ছে। তবু দলের প্রতি ধোনির এতটাই দায়বদ্ধতা যে কোনও দিন সরে আসেনি। ফাইনাল পর্যন্ত চোট নিয়ে কোনও কথা বলেনি। সবাই দেখেছে দৌড়তে ওর কতটা কষ্ট হচ্ছে।”
গোটা আইপিএল-এ বাঁ-হাঁটুতে ব্রেস লাগিয়ে খেলেছিলেন তিনি। তবে কিপিং বা ব্যাটিং করা থামাননি। যদিও উইকেটের মাঝামাঝি দৌড়নোর সময় তাঁকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে দেখা গিয়েছিল। হাঁটুতে আঘাতের অস্বস্তি এড়াতে অনেক সময় তিনি একেবারে শেষ মুহূর্তে ক্রিজে এসেছিলেন। আইপিএল ফাইনালের পরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। কারণ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ফিট থাকলে আরও একটা মরসুম সমর্থকদের উপহার দিতে চান তিনি।
ধোনি অবসর প্রসঙ্গে ফাইনাল ম্যাচের পরেই বলেছিলেন, “দেখুন, আপনি যদি পরিস্থিতির বিচারে দেখেন, তাহলে এটাই সেরা সময় অবসর নেওয়ার। কিন্তু যে ভালোবাসা আর স্নেহতে আমাকে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার জন্য সহজেই বলতে পারি থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ। আমার জন্য কঠিন হবে আরও ন’মাস কঠিন পরিশ্রম করে অন্তত আরও একটি মরসুম খেলা। কিন্তু প্রচুর কিছু নির্ভর করছে শরীরের উপরে। আমার হাতে ছয়-সাত মাস আছে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য়। আমি ফিরলে সেটা ফ্যানদের জন্য আমার উপহার হবে। আমার জন্য ব্যাপারটা সহজ হবে না। ওরা যে ভালোবাসা-স্নেহ আমাকে দিয়েছে, ওদের জন্য কিছু করতে হবে।”
আবেগের বহিঃপ্রকাশ তাঁর মধ্যে কখনই সেভাবে দেখা যায় না। জেতা-হারার ঊর্ধ্বে তাঁর অভিব্যক্তি। কিন্তু ধোনিকে ফাইনালে আবেগি হতে দেখা গিয়েছে। আবেগি ধোনিকে দেখে হতবাক হয়েছেন হর্ষ। ধোনি সেই প্রসঙ্গে ফের যোগ করেছিলেন, “যদি আবেগের কথা ধরেন, তাহলে বলব, এটা আমার কেরিয়ারের শেষ অনুচ্ছেদ। আমার মনে হয় এবারের আইপিএল-এ যখন প্রথম ম্যাচ খেলছিলাম, তখন গ্যালারি ভর্তি স্টেডিয়ামে হাঁটছিলাম। সকলে আমার নাম ধরে ডাকছিল। আমার চোখ জলে ভরে এসেছিল। আমি ডাগআউটে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। আমি সময়ে নিয়ে উপলব্ধি করি যে, চাপ না নিয়ে আইপিএল উপভোগ করতে চাই। চেন্নাইতেও একই ব্যাপার হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম শেষ ম্য়াচ খেলেছি। যে ভাবে হোক কামব্যাক করতে পারলে ভালো লাগবে।”
ধোনির সফল অস্ত্রোপচারের খবরে মাহিভক্তরা নিঃসন্দেহে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। এখন অপেক্ষা, হাঁটুর চোট পুরোপুরি কাটিয়ে আগামী আইপিএলে ফের চেনা ছন্দের ধোনিকে দেখার। অন্তত ইয়োলো আর্মি, ফের হলুদ জার্সিতে দেখার জন্য মুখিয়ে আছে। ধোনি যদি শেষ পর্যন্ত খেলার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে আগামী মরসুমেও তাঁর বেস প্রাইজ হবে ১৫ কোটি টাকা। এত অর্থের যখন হাতছানি, সেই পরিস্থিতিতে ধোনি খেলা চালিয়ে যান কিনা, সেটিও একটি বিষয়। তবে তিনি তো চমক দিতে ওস্তাদ। আর তাই ২০২৪ সালে অধিনায়ক ধোনি যদি শুধু ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে মাঠে নামেন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। আবার তিনি যদি শেষ পর্যন্ত ব্যাট-প্যাড তুলে রাখেন, তাহলেও তাঁর সিদ্ধান্তকে কেউ টলাতে পারবেন না।