অনির্বাণ ঘোষ ও শ্যামগোপাল রায়
মশা মারতে ‘কামান দাগা’র অভ্যাস বহু পুরোনো। বর্ষায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কমাতে মশার বংশ ধ্বংসে পাড়ায় পাড়ায় চলে ফগিং। অর্থাৎ যন্ত্রের সাহায্যে ধোঁয়ার মতো ওষুধ ছড়ানো। বরাবরের বিশ্বাস ছিল, এতে মশা ও লার্ভার বিনাশ ঘটে। কিন্তু কলকাতা পুরসভার একটি গবেষণা দেখাল, এ আসলে বিশ্বাসই, বাস্তব নয়।

KMC: ডেঙ্গি মোকাবিলায় কড়া দাওয়াই পুরসভার, ১ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হল বাড়ি মালিককে
কেননা, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে ২০১৭-য় নিয়মিত ফগিং করেও লাভ হয়নি। কোনও এলাকাতেই কমেনি ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। মশা নিধন হয়নি ফগিংয়ে। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বিষয়টি গবেষণাপত্রের আকারে লিখেছিলেন। সেই প্রবন্ধ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি রিসার্চ নামে বিজ্ঞানপত্রিকায়।

Dengue Fever: বর্ষা আসতে না আসতেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি, জেলায় লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, তৎকালীন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য), অধুনা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের নির্দেশে ২০১৭-য় ডেঙ্গির মরসুমে ফগিংটা করা হয়েছিল মূলত লাভ-লোকসান বুঝতে। ফগিং ও তার প্রভাব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলি লিপিবদ্ধ করা হয়। ডেঙ্গির বাহক মশা এডিস ইজিপ্টাই যেহেতু ৫০-১০০ মিটার রেঞ্জের মধ্যেই ওড়াউড়ি করে, তাই ডেঙ্গি-কবলিত প্রতিটি বাড়ির আশপাশে ১০০ মিটার ব্যাসার্ধে ফগিং করা হয়েছিল পাইরেথ্রাম (২%) দিয়ে। ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর মেলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফগিং শুরু হয়েছিল।

Dengue : ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে কলকাতাকে টক্কর মুর্শিদাবাদ, হুগলির
এর ৭-১০ দিনের মাথায় ফের কয়েক দফা ফগিং হয় ওই সব এলাকায়। কিন্তু কোনও লাভই হয়নি বলে জানাচ্ছেন গবেষণাপত্রের লেখক দেবাশিস। তাঁর কথায়, ‘ওই বছর মোট ২,৩৭৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন কলকাতা পুর-এলাকায়। জানুয়ারি থেকে জুনে প্রতি মাসে যেখানে বিক্ষিপ্ত ভাবে ৬-১৬ জন আক্রান্ত হতেন, সেখানে শুধু জুলাই মাসে ৭৬ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। অগস্টে সংখ্যাটা বেড়ে হয় ২৭০। তার পরেই চার মাস ধরে ফগিং অপারেশন হয়েছিল।’

KMC Parking Fee : পাকিং ফি নিতে বাধ্যতামূলক ই-পস! কঠোর অবস্থান কলকাতা পুরসভার
কিন্তু তাতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেনি, লাগামও দেওয়া যায়নি ডেঙ্গির ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফে। বরং অগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ৬৩.৩% বেড়ে যায় আক্রান্তের সংখ্যা। সেপ্টেম্বরে ৫৯০ জন ও অক্টোবরে ৮৪৭ জন নতুন করে ডেঙ্গিতে সংক্রমিত হন কলকাতায়। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ‘কোনও লাভ হচ্ছে না দেখেই কলকাতা পুর-এলাকায় ফগিং বন্ধ করা হয় ২০১৮ থেকে।’ দেবাশিস জানাচ্ছেন, ফগিংয়ে বিপুল টাকা খরচ হয়। অথচ লাভ হয় না। কেবল একটা মিথ্যে সুরক্ষার আশ্বাস দেওয়া হয় মানুষকে। এর চেয়ে ‘রিডাকশন অ্যাট সোর্স’ বা মশা জন্মানোর জায়গাটাকেই কমিয়ে ফেলা এবং লার্ভা জন্মালে লার্ভিসাইড স্প্রে করে মেরে ফেললে লাভ বেশি।

Dengue in Kolkata : শহরে বাড়ছে ডেঙ্গি সংক্রমণ, মোকাবিলায় নজর পুরভবনেও
এখন আর কলকাতায় ফগিং হয় না। কিন্তু রাজ্যের অনেক পুর-এলাকাতেই এখনও ফগিংয়ে দেদার টাকা খরচ হচ্ছে। এই খরচ বন্ধ হওয়া দরকার বলেই মনে করেন দেবাশিস। নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘মানুষ মনে করেন, ফগিংয়ে মশা মারা যায়। সে কারণেই এটা করা হয়।’ বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারাপার্সন দিলীপনারায়ণ বসুও জানাচ্ছেন, যে জায়গায় মশার উৎপাত বেশি, সেখানকার মানুষ দ্রুত পদক্ষেপ চান বলেই ফগিং করা হয়। লাগোয়া দক্ষিণ দমদম পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের পুর-পারিষদ সঞ্জয় দাস অবশ্য জানাচ্ছেন, মশার লার্ভা নষ্ট হয় না বলেই ২০২২ থেকে ফগিং বন্ধ করা হয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version