একসময় চিঠিপত্রই ছিল যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। নিকট আত্মীয় পরিজনের পাশাপাশি কাছের মানুষের কাছে চিঠিপত্র পাঠানোর জন্য রাস্তার পাশে বসানো হয়েছিল লাল রঙের ডাক বাক্স। আর সেই ডাক বাক্সে চিঠি ফেলার পর মানুষ অপেক্ষা করত কখন তার প্রিয়জন সেই চিঠি পাবেন। যদিও বর্তমানে সেইসব এখন অনেকটাই অতীত।

ডিজিটালের ছোঁয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন এসেছে। ফলে মানুষের কাছে এইসব ডাক বাক্সের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই ফুরিয়েছে। ব্যাস্ততম মানুষের জীবনে হারিয়ে যেতে বসেছে চিঠি লেখার অভ্যাস। আর অনেকটাই প্রয়োজন কমে যাওয়ায় লাল রঙের ডাক বাক্সগুলো এখন অবহেলায় পড়ে আছে রাস্তার পাশে।

Kolkata Trending News : হুক্কা হুয়া! নয়ের দশকের সেই চেনা ডাক ফের শুনছে বেহালা
যদিও ডাক বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘এখনও নিয়ম করে ডাক বাক্স খোলা হয়। শুধু তাই নয় ডাক বাক্সের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করানোর পাশাপাশি চিঠি লেখার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে চিঠি লেখার প্রতিযোগিতার আয়োজন ও করা হচ্ছে।’

‘কোথায় গেলে গো, তোমাদের চিঠি আছে’-একসময় দুপুরে পিওনের এই ডাক শুনেই দৌড়ে সদর দরজায় ছুটে যেত বাড়ির কাচিকাঁচারা। হাসিতে ভরে উঠত চিঠি প্রাপকের মুখ। বাড়ির ক্ষুদে থেকে প্রবীন সকলেই অপেক্ষা করে থাকত চিঠির সারমর্ম শুনতে। আবার যার চিঠি আসত না সেও অপেক্ষা করে থাকত পরেরদিনের জন্য।

Student Death : স্কুল ছাত্রীকে খুনের ঘটনার প্রতিবাদ মিছিল, উত্তেজনা শিলিগুড়িতে
তবে শুধু চিঠির কথা বললে ভুল হবে। দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ন প্রয়োজনের পাশাপাশি উৎসব অনুষ্ঠানে একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের অন্যতম অঙ্গ ছিল এই ডাক বাক্স। যদিও বর্তমান স্মার্টফোনের যুগে চিঠি লেখা প্রায় বিলুপ্ত। তার জায়গা দখল করেছে ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, মেসেঞ্জার।

উলুবেড়িয়া শহরে ওটি রোডের পাশে কযেকটি ডাক বাক্স এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যার মধ্যে একটি উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে। যদিও এই ডাক বাক্সের সামনে ব্যবসায়ী তার পসরা সাজিয়ে বসায় অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে গিয়েছে সেটি।

এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘চিঠি লেখা হচ্ছে একটি শিল্প। আগে নিয়মিত চিঠি আদানপ্রদানের কারণে দিনের কয়েকটি নির্দিষ্ট সময়ে এই ডাক বাক্স খুলে চিঠিপত্র বের করা হত। যদিও বর্তমানে কখন এই ডাক বাক্স খোলা হয় সেটা অনেকেই জানে না।’ তাঁর মতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমাজ আধুনিক হোক এটা আমরা সবাই চাই।

Siliguri News Today : ছাত্রী খুনে শিলিগুড়িতে ১২ ঘণ্টার বনধ, রাস্তায় গাড়ি কম! দুর্ভোগে পর্যটকরা
কিন্তু সেটা পুরাতন ঐতিহ্যকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রেখে। এই প্রসঙ্গে জগৎপুর আনন্দভবন ডেভ এন্ড ব্লাইন্ড স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অজয় দাস বলেন, ‘যুগ যে গতিতে এগোচ্ছে ডাক বিভাগ সেই গতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় ডাক বিভাগের উপর মানুষের আগ্রহ কমেছে। তবে ডাক বাক্সের মধুর স্মৃতির কথা কখনই অস্বীকার করা যাবেনা। কারণ ডাক বাক্স মানুষের কাছে একটা আবেগের জায়গা।’

আসলে বেগের সঙ্গে আবেগ তাল মেলাতে পারছেনা বলে এই অবস্থা বলে জানান অজয় দাস। অন্যদিকে ডাক বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘রবি ঠাকুরের কথায় বিজ্ঞান মানুষকে বেগ দিয়েছে কেড়ে নিয়েছে আবেগ। পৃথিবী দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু মানুষের আবেগ কর্মসংস্থান হারিয়ে গিয়েছে। যদিও ডাক বিভাগ এই আবেগকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। সারা ভারত জুড়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিউ ইন্ডিয়া শীর্ষক হাতের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। তবে যতই মানুষ আধুনিক হোক না কেন হাতে চিঠি লেখা বা পিওনের কাছ থেকে চিঠি সংগ্রহ করার আনন্দই আলাদা।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version