কলকাতার বুকে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র মূর্তি। সেই তালিকায় রয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে ব্রিটিশ রাজপুরুষ, প্রাক্তন জননেতা, খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদ, এবং বহু বিশিষ্ট মানুষ। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় সেগুলি অনাদরেই পড়ে থাকে। মূর্তিতে ধুলোময়লা জমে থাকায় পরিচয় জানতেও ভিরমি খেতে হয়। দেশ-বিদেশের যে-সব পর্যটক কলকাতায় আসেন, তাঁরাও মূর্তিগুলি দেখে ঠিকমতো ঠাহর করতে পারেন না।
তাই মূর্তি চেনাতে আলাদা করে নোটিস বোর্ড লাগানোর পাশাপাশি কিআর কোড ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ত দফতর। কিউআর কোড স্ক্যান করলেই যাঁর মূর্তি, তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। মূর্তিগুলি যাতে বছরভর সাফসুতরো থাকে, তারও ব্যবস্থা করা হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই উদ্যোগ পূর্ত দফতরের। আপাতত কলকাতা ময়দান চত্বরে যে-সব মূর্তি রয়েছে, সেগুলির পাসে নোটিস বোর্ড লাগানো হবে। ধাপে ধাপে শহরের অন্যত্রও একই ব্যবস্থা হবে। মূর্তিগুলি এলইডি আলোতেও সাজানো হবে। পূর্ত দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, ময়দানে যত মূর্তি রয়েছে, সেগুলির সঙ্গে নোটিস বোর্ড টাঙানো হবে।
তাতে যাঁর মূর্তি, তাঁর নাম-পরিচয়, কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকবে। এমনকী মূর্তিটা কখন বসেছিল, সেই ইতিহাসও জানা যাবে। আরও বেশি তথ্য জানতে হলে কিউআর কোড স্ক্যান করে জেনে নেওয়া যাবে। পূর্ত দফতরের হিসাবে, ময়দান চত্বরে মোট ২৬টি মূর্তি রয়েছে। অধিকাংশই পূর্ণাবয়ব মূর্তি। এগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে পূর্ত দফতরই।
তবে কর্মীর অভাবে সারা বছর ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হয় না। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশির ভাগ মূর্তির সারা বছর কেউ খোঁজও রাখেন না। মূর্তিগুলির উপরে ধুলো জমে থাকে। পাখিদের বিষ্ঠায় ঢাকা পড়ে। মূর্তি চিনতে অসুবিধা হয়। কিআর কোড চালু হলে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘এটা সরকারের ভালো উদ্যোগ। তবে মূর্তিগুলি যাতে সারা বছর পরিচ্ছন্ন থাকে, সেটাও দেখা দরকার। মূর্তিগুলির উপরে ছাউনি হলে ভালো হয়। কলকাতায় বহু মূর্তি রয়েছে রাস্তার মাঝখানে। সেগুলি সরানোও দরকার।’ পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়ের বক্তব্য, ‘মূর্তিগুলি যাতে সুন্দর থাকে, তার চেষ্টা করছি। অনেকে বলতেন, কার মূর্তি–চেনা যাচ্ছে না। সে জন্যে প্রত্যেকটি মূর্তির সঙ্গে ইনফোগ্রাফিক্স দেওয়া থাকবে। কিউআর কোড ব্যবহার করে অনেক কিছু জানা যাবে।’