Duttapukur Crackers Factory Blast: চার দেওয়ালের মাথায় ছাদ। নিজের বাড়ি নিয়ে স্বপ্ন দেখেন প্রত্যেকেই। সারাজীবনের কষ্টার্জিত অর্থ জমিয়ে সামর্থ্য মতো একটা বাড়ি তৈরি করতে পারেন মধ্যবিত্তরা। কষ্টের অর্থ দিয়ে তৈরি বাড়ির একটা ক্ষতিও সহ্য করা হয় অসম্ভব। এমন ভাবেই তিলে তিলে অর্থ জমিয়ে বাড়ি বানিয়েছিলেন মফিজ উদ্দিন আলি। একটা বাড়ি বানানোর খরচ জোগাড় করতে লোকের বাড়ি পায়খানা পর্যন্ত পরিষ্কার করেছেন তিনি। কিন্তু বাড়ি বানানোর মাত্র চার মাসের মধ্যেই নড়ে গিয়েছে বাড়ির ভিত। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বাড়ির এক পাশ। সাধের পোষ্যের জন্য বানানো ঘরও।

এমনই অসহায় অবস্থা দত্তপুকুর থানার অন্তর্গত মোচপোলের বাসিন্দা মফিদ উদ্দিন আলির। গত ২৭ অগাস্ট দত্তপুকুরে হওয়া বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ধ্বংস মফিজ উদ্দিন আলীর কষ্টার্জিত অর্থে তৈরি বাড়ি। শুধু তাই নয়, মৃত্যু হয়েছে তার সাধের পোষ্য গোরু পঞ্চাশের। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে গোরুদের জন্য পাখা লাগানো গোয়ালঘর।
Duttapukur Blast News : ‘বাজি বিস্ফোরণ নয়, যা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার…!’ দত্তপুকুরকাণ্ডে ‘আজব’ দাবি কেরামতের স্ত্রীর

বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মফিজ উদ্দিন আলির বাড়ি। তার বাড়িতে দুইটি গোরুও ছিল পঞ্চাশ ও মরা। বড় গরুর নাম ছিল পঞ্চাশ। যেখানেই থাকত নাম ধরে ডাকলেই ছুটে আসত। আর ছোট গোরুটির নাম ছিল মরা। আজ মরা বেঁচে আছে ঠিকই, কিন্ত তার আস্থানা গোয়াল ঘর বলে কিছু নেই। তাই বাইরে খোলা ছাদের নীচে সারাক্ষণ বেঁধে রাখতে হয় তাঁকে। মফিজ উদ্দিন আলি তাঁর পরিবার নিয়ে কোনওরকমে রয়েছেন ভাঙা বাড়িতে।
Duttapukur Blast News : কংক্রিটের চাঙড় উড়ে এসে কেড়ে নিল পাকা ছাদটা, ভয়াবহ অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা প্রত্যক্ষদর্শীর

সেই বাড়ির অধিকাংশ অংশ এখন ধ্বংসস্তূপ। বিস্ফোরণে শামসুলের বাড়ির ছাদ উড়ে এসে তার বাড়িকে তছনছ করে দেয়। বাজি কারখানার বাজি তৈরি সরঞ্জাম এখন মফিজের ঘরের ভিতরে রয়েছে। বাড়ির প্রতিটা পিলার ফাটল ধরে গিয়েছে। পিছনের দিকে কিছু ঠিক থাকলেও বাড়ির সামনের অংশ সবটাই শেষ। ছেলের জন্য ওপরে ঘর তুলবেন বলে পরিকল্পনা করেছিলেন,কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে নতুন করে ফ্লোর তৈরি তো, দূর ভেঙে ফেলতে হবে গোটা বাড়ি। আবারও নতুন করে ভেঙে ফেলতে হবে বাড়ি।
Duttapukur Blast : দত্তপুকুরে আলু বোমা বাঁধার ইকোনমিতেই স্বনির্ভর মহিলারা, মুখে কুলুপ প্রশাসনের

এই বিস্ফোরণ যেন তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মফিজের মেয়ে। কতটা কষ্ট করে বাবা বাড়িটি বানিয়েছিলেন, তা বলতে গিয়ে কষ্টে ভেঙে পড়লেন তরুণী। তিনি জানান, কী করেননি মফিজ! হোটেলে কাজ, চায়ের দোকানে কাজ,এমনকী লোকের বাড়িতে গিয়ে পায়খানাও পরিষ্কার করে ১৫ লাখ টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকার সঙ্গে আর কিছু টাকা ছেলে দিয়েছিল। সব টাকা ঢেলে এইভাবে চার মাস আগে ১ কাটা জমির উপর কোনওরকমে খাড়া করেছিলেন একটি বাড়ি। মাস চারেক যেতে না যেতেই নেমে এল বিপর্যয়।
Duttapukur News : ফ্রিজেই পড়ে মাংসের বাটি, প্রেমিকার সঙ্গে ঘর বাঁধা হল না রবিউলের

সবে নতুন বাড়িতে বসবাস শুরু করেছিলেন। এখনও বাড়ির কাজ শেষ হয়নি, আর তারই মধ্যে ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা। ছেলেকে বাইক কিনে দেবে বলে ৭২ হাজার টাকা রেখেছিলেন মসিদ আলী আর বাইক কীভাবে কিনবে তা নিয়ে আর ভাবতে পারছেন না তিনি। এই বিস্ফোরণে শুধু যে বাড়ির ক্ষতি হয়েছিল তাই নয়, সেই সুযোগে বাড়িতে লুটপাট হয়েছে বলেও অভিযোগ। প্রচুর জিনিসপত্র খোওয়া গিয়েছে। মেয়ে ও বাবা তাই করজোরে কাঁদতে কাঁদতে মুখ্যমন্ত্রী কাছে অনুরোধ করেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যেন সহযোগিতা করেন।’
Duttapukur Blast Update : বিস্ফোরণস্থলের পাশের বাঁশবাগানে স্টোনচিপ-মেটাল পাউডার! দত্তপুকুর নিয়ে মুখ খুললেন ডিএম-এসপি

এই বাজি কারখানা বন্ধ করার কথা অনেকবার বলেছিলেন মফিজ নিজে। কিন্তু তাতে হুমকি ছাড়া আর কিছু জোটেনি। অনেকেই এই বাজি কারখানার বিরোধিতা করেছিল কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আজ বাড়ির যে পরিস্থিতি তাতে বাড়ি যখন তখন ভেঙে পড়তেও পারে। যদিও রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেনি, তাই যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন এবং মানসিক ভাবে ভেঙে পরেছেন মফিজ উদ্দিন আলী।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version