এই সময়: ম্যাচ হারলেও সজল ঘোষের ঝোড়ো ব্যাটিংয়েই জয়ের স্বাদ পেতে চাইছে বিজেপি। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর ভিড়কে কৌশলে নিজেদের দলের জনপ্রিয়তা হিসেবেই ‘প্রজেক্ট’ করতে চাইছেন বঙ্গের গেরুয়া নেতারা। খাতায়-কলমে উত্তর কলকাতার এই পুজোর সঙ্গে বিজেপির তেমন কোনও যোগসূত্র নেই। কিন্তু বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষ ওই পুজো কমিটির সর্বেসর্বা।

ফলে তাঁকে সামনে রেখেই বঙ্গ-বিজেপির শীর্ষ নেতারা পুজোয় নিজেদের সাফল্যকে দিল্লির দরবারে হাজির করতে চাইছেন। রাম মন্দিরের আদলে পুজো মণ্ডপ তৈরি হওয়ায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও মজেছেন সজলে। রাজ্য বিজেপির বাকি নেতারা কীরকম দুর্গাপুজো করলেন, তা নিয়ে আর বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছেন না কেউ।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, দুর্গাপুজোকে হাতিয়ার করে বাংলার গেরুয়া নেতারা জনসংযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। সে সংক্রান্ত কিছু ফরমানও জারি করা হয়েছিল দিল্লি থেকে। যেমন, জেলা এবং মণ্ডলস্তরের বিজেপি নেতাদের প্রত্যেককে স্থানীয় পুজো কমিটিগুলিতে মিশতে হবে। এবং রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে বিজেপির উদ্যোগে একটি করে বারোয়ারি পুজোর আয়োজন করতে হবে। মোদ্দা কথা, বারোয়ারি দুর্গাপুজোর আয়োজনে তৃণমূল নেতাদের মৌরসিপাট্টা ভাঙারই নিদান দিয়েছিল দিল্লি।

এমনকী, বিজেপির শর্ত মেনে পুজো করলে পুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার বার্তাও দেয় পদ্মের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পরিসংখ্যান ঘাটলেই দেখা যাবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর এ হেন তৎপরতা সত্ত্বেও রাজ্যের সিংহভাগ দুর্গাপুজো কমিটিগুলিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিলেন তৃণমূল নেতারাই। বিজেপি সেখানে দাঁতও ফোটাতে পারেনি। পদ্ম নেতাদের উদ্যোগে রাজ্যে হাতে গোনা কয়েকটি দুর্গাপুজো হলেও সেখানে ভিড়ভাট্টাও বিশেষ হয়নি।

ব্যতিক্রম বিজেপি নেতা সজল ঘোষের উদ্যোগে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের রাম মন্দির থিমের পুজো। শহরের অন্যান্য বিগ বাজেটের পুজোগুলিকে এ বার পিছনে ফেলে দিয়েছে ‘রামমন্দির’। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখ রক্ষা করেছেন সজল। উনি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। আমাদের দলের বাকি নেতারা কেউ দু’রান, কেউ পাঁচ রানে আউট হয়েছেন। দল হিসেবে আমরা তৃণমূলের কাছে হারলেও সজল ঘোষের তাক লাগানো পুজো মণ্ডপ সবাইকে চমকে দিয়েছে।’

Santosh Mitra Square Puja Pandal : দশমীর পরও সন্তোষ মিত্রর ঠাকুর দেখার সুযোগ! আরও কতদিন খোলা থাকবে মণ্ডপ? জানালেন সজল
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান-সহ বিজেপির তাবড় নেতা-নেত্রীরা দিল্লি থেকে উড়ে এসেছিলেন সজলের পুজো দেখতে। রাজ্য বিজেপির বহু নেতাকে পুজোর ক’দিন দেখা গিয়েছে পুজো প্রাঙ্গনে সজলের সঙ্গে সেলফি তুলতে।

রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর কথায়, ‘৬৭টি যুদ্ধ, সাড়ে তিন লক্ষ মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষ তাঁর অস্মিতা, আত্মপরিচয়ের প্রতিষ্ঠা পেতে চলেছে আগামী ২৪ জানুয়ারি। গর্ভগৃহের উপরেই তৈরি হয়েছে রামমন্দির। তার আদলে সেজে উঠেছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দুর্গাপুজো। রাম ভারত। ভারতই রাম—পুজোর দিনগুলিতে সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার।’

সজল নিজে অবশ্য লাজুক হেসে বলছেন, ‘মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। দলের সমর্থন পেয়েছি। প্রমাণ করে দিয়েছি, বাংলার মানুষের ভাবাবেগের সঙ্গেও রাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version