আলোর টানে ছুটে আসে ওরা। কেউ কেউ আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে আলোর উপর। অনেকে বলেন, আলোর তাপে পুড়ে দলে দলে মারাও যায় তারা। দুর্গাপুজো শেষ হতেই ধীরে ধীরে ওদের দাপট বাড়ে। একসময় মজা করে আলোর নীচে কাপড়ের টুকরো লাগিয়ে রাখতেন অনেকে। সারি সারি মৃতদেহ পড়ে থাকত সেখানে। সে দৃশ্য ভোলার নয়। মাঝে শ্যামাপোকা উধাও হয়ে গিয়েছিল! কিন্তু এ বছর ফের নিজেদের গড়ে ফিরে গিয়েছেন তারা।

শ্যামাপোকা আসলে কী?

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগের অধ্যাপক শুভঙ্করকুমার সরকার এই সময় ডিজিটাল-কে বলেন, ‘শ্যামাপোকা আদতে লোকাল বা স্থানীয় নাম। আদতে এর নাম, গ্রিন লিফহপার। এই ধরণের পোকা আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়। শ্যামাপোকার দুটো প্রজাতি দেখা যায়, একটির নাম, Nephotettix Virescens, অন্যটি Nephotettix Nigropictus।’

ছবি সৌজন্যে: unsplash

শ্যামাপোকা কি কামড়ায়?

কলকাতার জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (ZSI) বিজ্ঞানী অনীল দুবে এই সময় ডিজিটালকে বলেন, ‘এই পোকার আদতে মানুষকে কামড়ানোর কোনও উদ্দেশ্যে থাকে না। কিন্তু, এদের পায়ে এক ধরনের নখ থাকে। স্বাভাবিকভাবে তারা গায়ে বসলে সেটা কামড়ের মতো অনুভব হবে। মানুষের ক্ষতি হয় না, বিষাক্ত নয়। ফসলের ক্ষতি হয়। কিছু সময় এরা উদ্ভিদের রোগ একের থেকে অন্য উদ্ভিদে ছড়ায়।’ অনেকের মতে আবার এই পোকা সাধারণত শস্য বা পাতার রস চুষে খায়। মানবদেহে বসেও অনেক সময় তারা সেই চেষ্টা করে। তার ফলেই কিছু সময় তা কামড়ের মতো অনুভব হয়।

শহর কলকাতা।

এ বছর কি পোকার প্রাদুর্ভাব বেশি?

রাজ্যের কৃষি দফতরের কর্তারা বলছেন, সেরকম উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। তবে গত কয়েক বছরের থেকে এ বছর তুলনামূলক শ্যামাপোকা বেশি নজরে এসেছে। তবে এখনও রাজ্যের কোথাও খুব বেশি মাত্রায় এই পোকার প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে কোনও তথ্য আসেনি। সাধারণত, বৃষ্টি কম হলে এই পোকার বাড়বাড়ন্ত হয়। ZSI-র বিজ্ঞানীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, এ বছর কলকাতায় কিছুটা বেশি এই পোকা দেখা গিয়েছে।

ধান ক্ষেতের ছবি। নিজস্ব চিত্র।


শ্যামাপোকা নিয়ে জরুরি কিছু তথ্য

১. ধান উৎপাদনকারী রাজ্যে বেশি দেখা যায় এই পোকা।
২. এদের প্রধান খাবার ধান গাছের রস।
৩. পোকা মারতে চাষিরা কীটনাশক ব্যবহার করেন, তা বাড়লে পোকার আনাগোনা কমে যায়।
৪.জলবায়ুর পরিবর্তনও এদের বেঁচে থাকার এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

ছবি সৌজন্যে: unsplash

বাড়িতে পোকার আক্রমণ বাড়লে কী করবেন?

  • আলোর কাছে নিমপাতা বেঁধে রাখুন,তাতে শ্যামাপোকার হাত থেকে মুক্তি মিলবে।
  • আলোর কাছে ইউক্যালপিটাস অয়েল ও লেমন এসেনশিয়াল অয়েল রেখে দেওয়া যেতে পারে।
  • ল্যাভেন্ডার তেলের মিশ্রণও শ্যামাপোকা তাড়াতে দারুণ উপযোগী।

তবে শ্যামাপোকার বাড়বৃদ্ধিকে একদিক থেকে ভালো ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, কলকাতায় যথেষ্ট পরিমাণ সবুজ আছে বলেই বাড়ছে শ্যামাপোকারা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version