সম্প্রতি বনগাঁ শহরে বিশেষ করে স্কুলের সামনে বেপরোয়া গাড়ির গতির ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। স্কুলের ছাত্র, অভিভাবক মিলিয়ে কয়েক জনের প্রাণও গিয়েছে। গাড়ির গতিতে রাশ টানতে পুলিশ এবং বনগাঁ পুরসভার কাছে আবেদন করেছিলেন বাসিন্দারা। এ বার দুর্ঘটনা রুখতে শহরের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা, বিশেষ করে স্কুলের সামনে স্পিড ব্রেকার লাগানোর কাজ শুরু করল বনগাঁ পুরসভা।
ইতিমধ্যে পেট্রাপোলগামী যশোর রোড-সহ একাধিক জায়গায় ফাইবারের স্পিড ব্রেকার লাগানো হয়েছে। এর জন্য পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। রাতের দিকে দুর্ঘটনার হাত থেকে শতাব্দী প্রাচীন গাছগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে গাছের গায়ে তেরঙ্গা রেডিয়াম রিফ্লেক্টরও লাগানো হয়েছে।
জানুয়ারি মাস থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বনগাঁ, ছয়ঘরিয়া, গোপালনগরে ট্রাক-সহ অন্যান্য যানবাহনের বেপরোয়া গতির বলি হতে হয়েছে স্কুলের ছাত্র থেকে অভিভাবক সহ পথচারীদের। পেট্রাপোলগামী যশোর রোডের ধারে ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় তিনটি হাইস্কুল এবং একটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। ফলে স্কুলের সময় পেট্রাপোলগামী যশোর রোডে ছাত্রছাত্রী-সহ অভিভাবকদের আসা, যাওয়া বাড়ে। ওই রাস্তা দিয়ে প্রচুর পণ্যবাহী ট্রাকও যাতায়াত করে। অপ্রশস্ত যশোর রোডে বেপরোয়া গাড়ির গতির কারণে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে বাড়ির ফেরার পথে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছিল কয়েকদিন আগে। স্কুলের অদূরে গার ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে পাঁচ বছরের একটি শিশুর।
গত একমাসে পথ দুর্ঘটনায় ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য বেপরোয়া গাড়ির গতি এবং যশোর রোডের ধারে পণ্যবাহী ট্রাকে পার্কিংকেই দায়ী করেন বনগাঁর বাসিন্দারা। ফলে পুলিশের পাশাপাশি বনগাঁ পুরসভার উপরেও চাপ তৈরি হয়েছিল। তার ফলে বনগাঁ পুরসভা শহরের দুর্ঘটনাপ্রবণ রাস্তায় ফাইবারের স্পিড ব্রেকার লাগানোর কাজ শুরু করেছে। পেট্রাপোলগামী যশোর রোডে ছয়ঘরিয়া এলাকায় পাঁচটি স্পিড ব্রেকার বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও বনগাঁ-চাকদহ রোড, বনগাঁ-বাগদা রোড, বিএস ক্যাম্প রোড-সহ একাধিক রাস্তায় এই ধরনের স্পিড ব্রেকার বসানো হচ্ছে। পুরসভার নিজস্ব তহবিলের অর্থেই কাজ হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
পুরসভা জানিয়েছে, শহর জুড়ে এই ধরনের প্রায় একশো স্পিড ব্রেকার লাগানো হবে। মূলত রাতের দিকে বাণিজ্যের জন্য পণ্যবাহী ট্রাকের গতি বেশি থাকে। বনগাঁ শহরে যশোর রোডের দু’ধারে প্রচুর শতাব্দী প্রাচীন গাছ রয়েছে। রাতের দিকে গাড়ির ধাক্কায় গাছেরও ক্ষতি হয়। তাই গাছের গায়ে রেডিয়াম রিফ্লেক্টর লাগানো হয়েছে।
বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, ‘দুর্ঘটনা রুখতে পুলিশ এবং ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত পুরসভার কাছে আবেদন করেছিল। এরপরেই গাড়ির গতিতে রাশ টানতে শতাধিক স্পিড ব্রেকার লাগানোর কাজ শুরু করেছে বনগাঁ পুরসভা। সীমান্তে যাওয়া গাড়িগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়া, অযথা পণ্যবাহী ট্রাক রাস্তার ধারে পার্কিং না করে নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের জায়গায় রাখার জন্য পুলিশ এবং বনগাঁর আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তরের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’
ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান উমা ঘোষ বলেন, ‘পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে রাস্তায় স্পিড ব্রেকার বসানোর জন্য পুরসভার কাছে আবেদন করা হয়েছিল। পুরসভা সেই ব্যবস্থা করেছে।’
স্কুলের অভিভাবক শিল্পী বিশ্বাস বলেন, ‘স্পিড ব্রেকার আগে বসানো হলে এতগুলো মানুষের প্রাণ যেত না। ভালো উদ্যোগ।’ ছয়ঘরিয়া রাখালদাস হাইস্কুলের শিক্ষক মনোজ সাহা বলেন, ‘স্কুলের সামনের জাতীয় সড়ক দিয়ে সব সময় ট্রাক যাতায়াত করে। বেপরোয়া গতির জন্য দুর্ঘটনাও ঘটে। সকলের সুরক্ষার জন্য পুরসভার এই পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।’