চিত্রদীপ চক্রবর্তী ও মণিপুষ্পক সেনগুপ্তসন্দেশখালি: তিন বছর আগে দখল হয়ে যাওয়া জমি সরকারের হস্তক্ষেপে গত শনিবারই ফেরত পেয়েছিলেন ওরা। কিন্তু মাঝের একটা দিন বাদ দিয়ে সোমবার সেই জমি উদ্ধার করতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়লেন বেড়মেজুরের মহিলারা। বলা হলো, এই জমি ফেরত দেওয়া যাবে না। এখন মাছচাষ চলছে। পরে দেখা যাবে। অভিযোগ, সরকারি কাগজ দেখানো হলেও মানতে চায়নি দখলদারেরা।

এদিন সকাল ১১টি নাগাদ বাধা পেয়ে মহিলারা দলবদ্ধ ভাবে সরাসরি চলে আসেন কাঠপোলের পুলিশি অভিযোগ কেন্দ্রে। সেখানে উপস্থিত ডিআইজি ভাস্কর মুখোপাধ্যায়কে পুরো বিষয়টি জানান তাঁরা। প্রশ্ন উঠেছে, গত কয়েকদিন ধরে একঝাঁক প্রশাসনিক কর্তা, এমনকী রাজ্যের দুই মন্ত্রী যখন উদ্যোগ নিয়ে দখল হয়ে যাওয়া জমি আসল মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দিচ্ছেন, সে সময়ে এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস কী করে পাচ্ছে জমি-হাঙ্গররা? রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’

সোমবার সকালে ঝুপখালির বাসিন্দা ফাল্গুনি সর্দার, প্রিয়াঙ্কা ভুইয়া সহ প্রায় দশজন মহিলা অভিযোগ কেন্দ্রে হাজির হন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মুখ ঢেকে এসেছিলেন। উপস্থিত পুলিশ কর্মীদের তাঁরা জানান, গত ২০২১ সাল থেকে তাঁদের চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দখল করে নেওয়া হয়েছিল। পরে বলা হয়, সেই জমির জন্য ‘জল-কর’ (স্থানীয় এলাকায় জমির ভাড়াকে এই নামে ডাকা হয়) দেওয়া হবে।

Trinamool Congress : সন্দেশখালিতে জমি ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু, জনমত নিয়ে পালটা প্রচারে নামছে তৃণমূল

কারও ক্ষেত্রে সেই অঙ্ক তিন হাজার, আবার কারও ক্ষেত্রে তা পাঁচ হাজার। কিন্তু এলাকার নেতা শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের ইশারায় সেই টাকা দেওয়া হয়নি। বেশ কয়েকবার জল-কর চাইতে গিয়ে জোটে ঠ্যাঙারে বাহিনীর হাতে মারধর। পার্টি অফিসের নিয়ে গিয়েও হেনস্থা করা হয় বাড়ির লোকেদের। এই অত্যাচারের সামনে আর টাকা চাওয়ার সাহস দেখাননি কেউ। পরিস্থিতি অবশ্য বদলাতে শুরু করে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি অভিযানের পরে।

গ্রামবাসী প্রায় দুশো কৃষক গর্জে ওঠেন এই অন্যায়ের প্রতিবাদে। শেষ পর্যন্ত ডিজিপি রাজীব কুমার, রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের জানান, তাঁদের দখল হওয়া জমি ফেরত দেবে সরকার। সেই অনুযায়ী বিএলআরও দপ্তর কাজ শুরু করে। গত শনিবার নিজেদের জমির নথি এবং আবেদন পত্র জমা দিয়ে সরকারি ভাবে মালিকানার কাগজপত্র পান এই মহিলারা।

Sandeshkhali Incident : প্রশাসনের নজর টানতেই আগুন জ্বলছে বেড়মজুরে

যাঁর মধ্যে ফাল্গুনির শ্বশুর অনন্ত সর্দার, অর্চনা সর্দারের আত্মীয় কালিপদ সর্দারের ৭ বিঘে জমি রয়েছে। এদিন সকালে নিজেদের জমির দখল নিতে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান সেখানে মাছচাষ করা হচ্ছে। অভিযোগ, তাঁরা ওই জমির মালিক জানাতেই ইদে মোল্লা নামে স্থানীয় এক নেতা হুমকি দিয়ে জানিয়ে দেন জমি ফেরত দেওয়া যাবে না। এরপর সকলে দলবদ্ধ ভাবে পুলিশের অভিযোগ কেন্দ্রে চলে আসেন। কথা বলেন পুলিশ কর্তার সঙ্গেও।
অর্চনা বলেন, ‘প্রশাসনের তরফ থেকে জরিপ করে আমাদের বলা হয়েছিল ওই জমিতে আপনারা ঢুকে পড়ুন। আজ ওখানে যেতেই ইদের লোকেরা বলে সিরাজের(শাহজাহানের ভাই) থেকে আমরা লিজে জমি নিয়েছি। এই জমি দেব না।’ ঝুপখালিতে গিয়ে অবশ্য ইদ মোল্লা অথবা তাঁর লোকেদের পাওয়া যায়নি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version