কথায় বলে পড়াশোনার কোনও বয়স হয় না। আর ইচ্ছা থাকলে যে সবই করা সম্ভব সেই উদাহরণ আরও একবার পাওয়া গেল। ৬০ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসরগ্রহণের পর নতুন করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনা শুরু উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম বিধানপল্লীর বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ গুহর। মনের অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করতেই ফের পড়াশোনায় ফেরা বলে জানান ইন্দ্রজিৎ।৬০ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসর নেন। আর তারপর ফের ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি‌ হয়ে পড়াশোনার শুরু করেন এক বাবা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ গুহ কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ফের উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছেন বেসরকারি এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার জন্য ছেলেকে এক সময় যে কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন, বর্তমানে নিজেও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে ভর্তি হয়েছেন সেই একই কলেজে। এখন জোড় কদমে চলছে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্লাস। এমনকী ইতিমধ্যে পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। অন্যান্য পড়ুয়াদের মতোই নিয়ম করে কলেজ যান ইন্দ্রজিৎ। বয়স যে একটা সংখ্যা মাত্র, ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয়, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন মধ্যমগ্রামের এই বাসিন্দা।

বাড়িতে কে কে আছেন?

করোনায় স্ত্রীকে হারিয়েছেন ইন্দ্রজিৎ গুহ। বর্তমানে ছেলে ও ৮২ বছরের বৃদ্ধা মা-কে নিয়েই তাঁর সংসার। কলেজ পাশ করে ছেলে চাকরি শুরু করছেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। ফলে সংসারে রান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সামলাতে হয় ইন্দ্রজিৎকেই। বয়সের কারণে তাঁর নিজের শরীরও কিছুটা দুর্বল হয়েছে। তবে নিজের লক্ষ্যে অবিচল তিনি।

দীর্ঘ কর্মজীবন ইন্দ্রজিতের

ইন্দ্রজিৎ জানান, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স নিয়ে বিএসসি পাশ করার পর ১৯৮৯ সালে মুর্শিদাবাদ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। তারপর, ১৯৯১ সালে চাকরি জীবনে প্রবেশ। প্রথম জীবনে বেসরকারি একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন তিনি। তারপর কিছুদিনের জন্য ডিআরডিও-র একটি রিসার্চ প্রজেক্টে যোগ দেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে কাজে নিযুক্ত হন। তবে সেখানেই শেষ নয়, নিজেকে প্রমাণ করতে ফের পরীক্ষায় বসেন। পরীক্ষায় সফল হয়ে, ১৯৯৭ সালে ইনস্টিটিউট অফ রেডিও ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে। তারপর দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে ২০২৩-এর ৩১ অগাস্ট অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

এতকিছুর মাঝেও পড়াশোনার প্রতি আকর্ষণ কোনওদিন সামান্যতমও কমেনি। ইন্দ্রজিৎ জানাচ্ছেন, মনে মনে জেদ ছিল, এক সময় পেট চালানোর যে পড়ার বই বন্ধ করে চাকরির অ্যাটেনডেন্স বুকে নাম লিখতে হয়েছিল, একদিন সেই বই আবারও খুলবেন। তার জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাতেও বসেন। এখন বেসরকারি এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চলছে তাঁর পড়াশোনা। তিন বছরে মোট ৬টি সেমিস্টার দিতে হবে তাঁকে। তারপর শরীর সঙ্গ দিলে আরও উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যেতে চান বছর ৬১-র এই ছাত্র।

সহযোগিতা পাচ্ছেন শিক্ষকদের

এদিকে ‘সিনিয়র স্টুডেন্ট’কে পেয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কলেজের শিক্ষকরাও। আর সহপাঠীদের কাছে তিনি ‘কাকু’। কেউ কেউ বলেন, ইন্দ্রজিৎ যেন ‘ম্যায় হুঁ না’ ছবির মেজর রাম প্রসাদ শর্মা, বেশি বয়েসে কলেজে ভর্তি হওয়ার নেপথ্যে যাঁর রয়েছে নির্দিষ্ট মিশন। আর ইন্দ্রজিতের মিশন শুধুই পড়াশোনা ও শেখা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version