শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। তাই বিজেপির নজর এ বার ভোট-গণনায়। নির্বাচন-পর্বের এই শেষ অধ্যায়ে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না পদ্ম-ব্রিগেড। কারণ, ভোট-সিলেবাসের এই অন্তিম অধ্যায়ে মনোযোগ না দিলে গত দু’মাসের যাবতীয় পরিশ্রমই জলে যাবে বলে তাঁদের অভিমত। আপাতত তাঁদের একটাই লক্ষ্য, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যাতে কাউন্টিং এজেন্টরা রাহুল দ্রাবিড়ের মতো পিচ কামড়ে পড়ে থাকেন, সেটা নিশ্চিত করা।গত বিধানসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে পদ্ম-নেতাদের আক্ষেপ, ২০২১-এ দলের কাউন্টিং এজেন্টরা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। হয়তো ৭৭টি আসনেই ইনিংস শেষ করতে হতো না তাদের। এ বার তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে কাউন্টিং এজেন্টদের আগে থেকেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে বিজেপি। যাতে কোনও অবস্থাতেই কাউন্টিং শেষ হওয়ার আগে গণনাকেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে না পড়েন এজেন্টরা।
রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর কথায়, ‘গত বিধানসভা ভোটে বহু আসনেই আমাদের কাউন্টিং এজেন্টদের হাল ছেড়ে দেওয়া মানসিকতা আমাদের ডুবিয়েছে। অনেক জায়গাতেই গণনা কয়েক রাউন্ড বাকি থাকতে গণনাকেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন এজেন্টরা। ফলে ওই শেষ তিন-চার রাউন্ডে তৃণমূল যা করার করে দিয়েছে।’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির কাউন্টিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে হাত লাগিয়েছে আরএসএস মনোভাবাপন্ন একটি সংগঠন। রাজ্যের ৪২টি আসনের বিজেপির কাউন্টিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করেছে এই সংগঠনটি। বিজেপির রাজ্যস্তরের এক নেতার কথায়, ‘প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের ১৮০ জন বিজেপি কর্মীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মূলত জোর দেওয়া হয়েছে, ভোট গণনা পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এজেন্টদের গণনাকেন্দ্রে বসে থাকার উপর।’
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বুধবার একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ২০২১-এ তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণনায় কারচুপির অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’টো কারণে ২০২১-এ ক্ষমতায় এসেছেন। তার মধ্যে একটি হলো—করোনার ফলে শেষ কয়েক দফার প্রচারে মোদীজি সভা করতে আসতে পারেননি। দ্বিতীয় কারণটি হলো, গণনায় কারচুপি। করোনাকালে সামাজিক দূরত্বের নামে ইভিএম থেকে কাউন্টিং এজেন্টের দূরত্ব ছ’ফুট করে দেওয়া হয়েছিল। কৌশলে গণনাকেন্দ্রের কর্মীদের মধ্যে তৃণমূলের লোকজন ঢুকে পড়েছিল। ভোট গণনায় ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল। এর ফলে বিজেপির অন্তত ৬৩টি আসন হাতছাড়া হয়েছিল।’
কাউন্টিং এজেন্টদের প্রশিক্ষিত করা নিয়ে বিজেপির এই তৎপরতাকে খোঁচা দিয়ে জোড়াফুল শিবিরের এক নেতা বলেন, ‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা! হারার পর প্রতিবারই বিজেপি নানারকম অজুহাত খাড়া করে। ওদের এ সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।’