উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দু’দিন আগে সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল বাবার। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শুভাঙ্গী। কিন্তু, বাবাই তাঁর জন্য স্বপ্ন দেখেছিলেন, মেয়ে বড় হয়ে চিকিৎসক হবে, দেশের দশের সেবা করবে। বাবার সেই স্বপ্ন বিফলে যেতে দেননি এই মেধাবী। চোখের জল মুছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। দিয়েছিলেন নিটও। সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় চোখ ধাঁধানো ফলাফল করলেন শুভাঙ্গী।পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর থানার অন্তর্ভুক্ত বড়রাঙ্কুয়া গ্রামের বাসিন্দা শুভাঙ্গী দে। ছোট বেলা থেকেই তিনি মেধাবী। মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করার পর বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন তিনি। দিনটা ২০২৩ সালের ১২ মার্চ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক দু’দিন আগের সকালে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শুভাঙ্গী। জীবনের অন্যতম বড় পরীক্ষায় বাবা পাশে থাকবে না, ভাবতেও পারেননি তিনি। সেই সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মা। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ের জন্য বাবার দেখা স্বপ্ন।

চোখের জল মুছে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছন তিনি। প্রতিকূলতাকে জয় করে শুধু পরীক্ষাই দেননি, পেয়েছেন ৪৬৭ নম্বরও। রামনগর বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী নিজের স্কুলে প্রথম হন। ছোটো থেকেই বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে চিকিৎসক করার। বাবার মৃত্যুর আগের দিনও সেই নিয়েই দীর্ঘ কথা হয়। সেদিন শুভাঙ্গীকে পাশে থাকার, সারাটা জীবন পাশে নিয়ে চলার বার্তা দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। এদিকে বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রমে কোনও খামতি রাখেননি এই মেধাবী। এক বছর ধরে করেছে কঠোর পরিশ্রম। এই প্রথমবার সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন তিনি। আর এই বার সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে নিটে সাফল্য পেয়েছেন এই ছাত্রী। ৭২০ নম্বরের পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৬।

ছোটোবেলা থেকেই মেধাবী শুভাঙ্গী পড়াশুনোর পাশাপাশি ছবি আঁকাতেও দক্ষ। তার এই সাফল্যে খুশি পরিবার থেকে শুরু করে প্রতিবেশী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্বপ্ন পূরণ করার জেদ এবং অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনও প্রতিকূলতাই যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন শুভাঙ্গী।
চোখে জল তাঁর পরিবারের। শুভাঙ্গী সফল হয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। বাবার দেখা স্বপ্ন পূরণে আরও একটি ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন এই মেধাবী।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version