সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
পাঁচশো বছর আগে হয়তো বা— সাতশো বছর কেটে গেছে তারপর তোমাদের আম জাম কাঁঠালের দেশে….
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির যে ছবি তাঁর কবিতায় ধারাবাহিক ভাবে লিখে গিয়েছেন, তাতে পাখির নীড়ের সঙ্গে পল্লি বাংলার রসালো সব ফলের উল্লেখও রয়েছে। তবে একদিন যে আম, জামের প্রাচুর্যের ছবি আঁকা ছিল গ্রাম বাংলায়, আজ তা থেকে বাদ পড়েছে জাম। আমের সঙ্গে জুড়ে ছিল যে ফল সেই জামগাছ বাংলা থেকে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে।আগামী পরশু জামাইষষ্ঠী। তার আগে এমনিতেই ফলের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। তবু আম, লিচুর দাম কিছুটা নাগালে থাকলেও জাম যেন সোনার দামে বিকোচ্ছে। বাজারে এক কেজি জামের দর তিনশো টাকা। গ্রাম বাংলায় জামগাছের আকালের কারণেই দাম এমন ঊর্ধ্বমুখী বলে জানাচ্ছেন ফলচাষি থেকে উদ্যানপালন দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা।

কৃষ্ণনগরের রাষ্ট্রীয় উদ্যানপালন গবেষণা কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পলাশ সাঁতরা জানাচ্ছেন, জামগাছ খুব পলকা হয়। গাছের উচ্চতাও বেশি। তাই জামগাছের ক্ষেত্রে ফলচাষিদের অনীহা রয়েছে। মূলত সেই কারণে কমছে জামগাছের সংখ্যা। ওই কৃষি বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, পুনে ও ঝাড়খণ্ডে এক প্রজাতির জামগাছ রয়েছে যার উচ্চতা ৭-৮ ফুটের মতো হয়।

মাটিতে দাঁড়িয়ে জাম পাড়া যায়। বলেন, ‘আমাদের এখানকার জামের বীজ মোটা হয়। পাশাপাশি শাঁস থাকে কম। কিন্তু পুনের ওই জাম শাঁসালো হয়। ভালো নার্সারিতে ওই জামগাছ মিলবে। চাষিদের বলব, ওই গাছ লাগাতে।’ কৃষি বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জামের ওষধি গুণও আছে। জামে ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, মিনারেল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। জামের বীজ ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে উপকারী। এই কারণেও জামের চাহিদা বাড়ছে। আকাশছোঁয়া দামের সেটাও একটা কারণ।

Dev : কথামতো কাজ! বৃক্ষরোপণের তোড়জোড় শুরু দেবের, বরাত পেল ১০ নার্সারি

তবে ফল বিক্রেতা গান্ধী সাহা বলছেন, ‘পুনের শাঁসালো জামের কেজিও এবার পাঁচশো টাকা। ওই দামে জাম কেনার খরিদ্দার বেশি পাওয়া যায় না। জামাইষষ্ঠীতে দাম আরও বাড়তে পারে।’ কালনা শহরের চকবাজারের জাম বিক্রেতা নকুল মাহাতো বলেন, ‘জাম পাড়া খুব কষ্টের। গাছ পলকা হওয়ায় ভেঙে যেতে পারে। সেই ভয়ে সহজে কেউ গাছে উঠতে চায় না। আবার মাটিতে পড়ে জাম ফেটে যায়। সেই জাম কেউ কিনতে চায় না। একদম ফ্রেশ জাম পাওয়াই এখন কঠিন। ফলে দাম এমন চড়া।’

জামগাছ কমে যাওয়ার পিছনে দুর্বল কান্ডের কথা বলছেন গাছমাস্টার হিসেবে পরিচিত শিক্ষক অরূপ চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘জামগাছের কান্ড ফোঁপড়া হয়ে যায়। ফলে গাছ বসাতে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। তবে পুনের ওই বিশেষ প্রজাতির জামগাছ বসানোর জন্য উৎসাহিত করছি আমরা। খণ্ডবনের মাধ্যমে ওই প্রজাতির জামগাছের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version