অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কাটোয়া
প্রত্নতত্ত্ববিদ থেকে ইতিহাসবিদ, সংগ্রাহক থেকে আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক- প্রায় সবার নজরেই থাকে মঙ্গলকোটের অজয় নদের খাত। বছরের পর বছর এই এলাকা ফিরিয়ে দিয়েছে গুপ্ত যুগ, পাল যুগ, কুষাণ যুগের মৃৎপাত্র, মূর্তি। ব্যক্তিগত সংগ্রহ, পুলিশি হেফাজত আবার কখনও লাইব্রেরিতে জায়গা পেয়েছে সেগুলো। কখনও সেই অ্যান্টিক নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহশালায়।এবার সেই পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রীর জন্য পাকাপাকি ভাবে গড়ে উঠতে চলেছে মিউজিয়াম। যে উদ্যোগ নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ।
ইতিমধ্যে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে জেলা পরিষদের বৈঠকে। মঙ্গলকোটের নতুনহাটের আশপাশে এর জন্য খোঁজা হচ্ছে উপযুক্ত জমি। এই জমি খোঁজার জন্য ভূমি দপ্তরকে ইতিমধ্যে নির্দেশও দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

প্রত্ন সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় অনুমতি জোগাড়ের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, ‘প্রতিনিয়ত মঙ্গলকোট থেকে উদ্ধার হচ্ছে প্রত্নসামগ্রী। কিন্তু এসব রাখার মতো কোনও জায়গা নেই। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে মঙ্গলকোটে প্রত্ন সংগ্রহশালা তৈরির প্রস্তাব আমরা নিয়েছি। ভূমি দপ্তরকে এর জন্য জমি দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মিউজিয়াম তৈরির জন্য যে সব কাগজপত্রের প্রয়োজন, তা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।’

মঙ্গলকোট তথা কাটোয়া মহকুমা এলাকায় সংগ্রহশালা তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। গোটা মঙ্গলকোট জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইতিহাসবিদদের মতে, মঙ্গলকোটে যে সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তা প্রায় হরপ্পার সমসাময়িক। তাছাড়া, গুপ্ত যুগ, পাল যুগ, সেন যুগ ও নবাবি আমলের প্রত্ন নিদর্শন তো হামেশাই পাওয়া যায় মঙ্গলকোটে। অজয় থেকে প্রায় প্রতি বছর উদ্ধার হচ্ছে প্রাচীন মূর্তি। কিন্তু এসব রাখার জায়গা নেই। ফলে হয় তা চলে যাচ্ছে বাইরে, নাহলে কারও বাড়িতে পড়ে থাকছে অবহেলায়। কখনও মন্দিরে নিয়ে গিয়ে পুজো করা হচ্ছে মূর্তিগুলো।

স্থানীয়দের দাবি ছিল, এলাকা থেকে সংগৃহীত প্রত্ন সামগ্রী সংরক্ষিত থাকুক এখানেই। একমাত্র মিউজিয়াম হলে পূরণ হবে সেই দাবি। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের বরিষ্ঠ পুরাতত্ত্ববিদ প্রকাশচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘এটা হলে নিঃসন্দেহে খুবই ভালো কাজ হবে। মঙ্গলকোটের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। এলাকায় এ ধরনের মিউজিয়াম হলে গবেষণার সুযোগ অনেকটাই বেড়ে যাবে।’

কাটোয়ার আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক স্বপন ঠাকুর বলছেন, ‘আমাদের তো এটা দীর্ঘদিনের দাবি এলাকায় ঠিকঠাক একটা সংগ্রহশালা হোক। এই বিষয় নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদের বিশেষ সুবিধা হবে। এলাকায় যাঁরা এই সব কাজে যুক্ত তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা হোক। এখানে অনেকের সংগ্রহেই রয়েছে প্রত্নদ্রব্য। সেগুলো যাতে সংগ্রহশালায় পাওয়া যায় তা নিয়ে কথা বললে মনে হয় ভালো হবে।’

—এটা হলে নিঃসন্দেহে খুবই ভালো কাজ হবে। মঙ্গলকোটের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। এলাকায় এ ধরনের মিউজিয়াম হলে গবেষণার সুযোগ অনেকটাই বেড়ে যাবে— প্রকাশচন্দ্র মাইতি, সিনিয়র আর্কিয়োলজিস্ট



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version